রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা: মুরগির যতগুলো ভাইরাসজনিত রোগ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক রোগ

হলো রানীক্ষেত রোগ। পৃথিবীর অনেক দেশে এই রোগ দেখা যায়, তবে সামান্য কিছু দেশ আছে যেখানে রানীক্ষেত রোগ

হয় না। এটি একটি মহামারী রোগ হিসেবে খ্যাত। উইকিপিডিয়ার ধারণা মতে সর্বপ্রথম ১৯২৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার

জাভাতে রানীক্ষেত রোগটি চিহ্নিত করা হয়। তারপর ১৯২৭ সালে যুক্তরাজ্যের  নিক্যাসল  শহরে দেখা যায়। আর এই

শহরের  নামানুসারে রোগটির নাম নির্ধারণ করা হয় নিউক্যাসল ডিজিজ।   ভারত সর্বপ্রথম ১৯২৮ সালে রানীক্ষেত নামক

স্থানেে এই রোগ দেখা যায় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে রানীক্ষেত ।

রানীক্ষেত রোগ

এই রোগটি নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত একটি রোগ।  রানীক্ষেত রোগটি হাঁস-মুরগি ও অন্যান্য পোল্ট্রির

ভাইরাস জনিত রোগ। নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাসের (এনডিভি) এর বিভিন্ন স্ট্রেইন থাকে । তবে সবচেয়ে বেশি থাকে

ভেলোজেনিক মধ্যম আকারের থাকে মেসোজেনিক এবং সর্বনিম্ন আকারে থাকে লেন্টোজেনিক । আবার টিকা দেয়ার জন্য

২ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে । এর মধ্যে ভেলোজেনিক ও মেসোজেনিক অতিমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। সবচেয়ে মারাত্বক

স্ট্রেইনটি হল ডিসারোট্রপিক ভেলোজেনিক নিউক্যাসল ডিজিজ।

মুরগির রানীক্ষেত রোগ কেন হয়

এই  ডিজিজ অত্যাধিক সংক্রমণ ব্যাধি। এই রোগ  আক্রান্ত পাখি থেকে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত ২ থেকে ৬

দিনেই এই রোগ ছড়িয়ে পরে। এই  রোগ সংক্রমনের  আরো অনেক উৎস আছে। তারমধ্য হলো দূষিত পানি, আক্রান্ত বা

মৃত পাখি, দূষিত সরঞ্জাম ও পোশাক। এটা বাতাসের মাধ্যমে এক সেড থেকে আরেক সেডে বা ফার্মে   ছড়িয়ে পড়ে।

রানীক্ষেত রোগটি মুরগি ছাড়া আরো অন্য পাখি যেমন হাঁস ,টার্কি ,কবুতরও কয়েলের মধ্যে হয়। কিন্তু হাঁস,কোয়েল, টার্কির

বেশি ক্ষতি করতে পারে না। তবে এই রোগ মানুষের মধ্যে হলেও বিশেষ কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

মুরগির রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ

 

প্যারামিক্সে ভাইরাস দ্বারা  সংক্রমিত হয়ে প্যাথোজেনিক মধ্যে মৃদু  থেকে অতিমাত্রার সংক্রমণ ঘটায়। লেন্টোজেনিক

স্ট্রেইন দ্বারা সংক্রমিত হলে শুধু শ্বাসনালীতে সীমাবদ্ধ থাকে । আর যদি ভেলোজেনিক স্ট্রেইনের ফলে মুরগির রানীক্ষেত

হয় তবে পাখির শ্বাসনালী ,পরিপাকতন্ত্র, স্নায়তন্ত্রে  ছড়িয়ে পড়ে। রানীক্ষেত রোগের ৫টি লক্ষণ দেখা যায় যথা:

  1.  ভিসেরুট্রপিক ভেলোজেনিক।
  2. নিউরুট্রপিক ভেলোজেনিক।
  3. নিউরুট্রপিক মেসোজেনিক।
  4. শ্বসনালীয় লেন্টোজেনিক।
  5. এন্টেরোট্রপিক এপ্যাথোজেনিক।

ভিসেরুট্রপিক ভেলোজেনিক

অত্যাধিক আক্রান্ত মুরগি হঠাৎ বসে পড়তে দেখা যায়। মুরগির  ক্ষুদ্রান্ত আক্রান্ত হয় এবং রক্তক্ষরণ হয় । পায়খানা পাতলা

ও সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। এমনকি প্রভেন্টিকোলাসে রক্তের ফোঁটা দেখতে পাওয়া যায়। খুব অল্প সময়ে  এক মুরগি  থেকে

অন্য মুরগি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। মুরগি খাবার খাওয়া কমে যায় এ পর্যায়ে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে মুরগি মারা যায় ।

মৃত্যুর হার ১০০ শতাংশ পর্যন্ত হতে দেখা যায়।

নিউরুট্রপিক ভ্যালোজেনিক

অধিক আক্রান্ত মুরগির এ পর্যায়ে শ্বাসনালী এবং শ্বাসতন্ত্র স্বতন্ত্র অত্যাধিক আক্রান্ত হয়। প্রচুর শ্বাসকষ্ট হয় এবং ট্রাকিয়ায়

রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। সাধারণত   পা,ঘাড় প্যারালাইসিস হয়ে পড়ে যায়। ডিম উৎপাদন কমে যায় এবং সেই সাথে পাতলা

 

খোসা ডিম পারে এ পর্যায়ে মৃত্যু ১০০% হয়ে থাকে।

নিউরুট্রপিক মেসোজেনিক

মাঝারি এ পর্যায় সাধারণত শ্বাসনালী আক্রান্ত হয়। মুখ, মাথা  ফুলে যায়। তার প্রচুর শ্বাসকষ্ট হয়, যার ফলে গরগর শব্দ

করে। অনেক সময় স্নায়তন্ত্র আক্রান্ত হয়ে মুরগির প্যারালাইসিস হতে দেখা যায়।  ছোট মুরগির এ রোগ বেশি হয়। আর

মৃত্যুর হার অনেক বেশি । বড় মুরগি আক্রান্ত হয় তবে খাবার খায়া ও ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়।

শ্বসনালীয় লেন্টোজেনিক

মৃদু আকার শ্বাসনালীর মধ্য ইনফেকশন লক্ষ করা যায়। শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণে গর গর শব্দ করে এবং অনেকদিন মুরগি

কষ্ট পায়। মুরগির চোখ মুখ ফুলে যায় তবে মৃত্যুর হার কম। দীর্ঘ সময় ধরে মুরগির উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাহত করে।

এন্টেরোট্রপিক এপ্যাথোজেনিক

অতি অল্প পাকস্থলীতে ইনফেকশন সৃষ্টি করে । চুনের মত সাদা পাতলা পায়খানা করে,আবার অনেক সময় হলুদ. সবুজ ও

সাদা অথবা মিশ্রিত পায়খানা করে। মলদ্বার বা লেজের দিকে পায়খানা লেগে থাকতে দেখা যায়।  খাবারের অরুচি থাকে

এবং ডিম উৎপাদন কমে যায় । এ পর্যায়ে মুরগি মারা যায় না।

মুরগির রানীক্ষেত ভ্যাকসিন

মুরগিকে টিকা দেওয়ার সময় কিছু সতর্কতামূলক দিক খেয়াল রাখতে হবে।  যেমন অত্যাধিক গরম এর সময় টিকা প্রদান

করা যাবেনা । সবচেয়ে ভালো হয় সকাল কিংবা বিকালে, যখন তুলনামূলক আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে । আবার কোনো ধরনের

অসুস্থ মুরগিকে টিকা প্রদান করা যাবে না।  টিকা সাধারনত  এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে টিকা দেওয়া শেষ করতে হবে।

টিকা দেওয়ার জন্য পানি ব্যবহার করবে সেই পানি  ডিস্টিল ওয়াটার হলে ভালো হয়। টিকা  প্রদানের সময় তাড়াহুড়া করা

যাবে না।

রানীক্ষেত ভ্যাকসিন দেয়ার সময় :

আমরা রানীক্ষেত রোগের প্রথমটিকে দিব সাধারণত

প্রথম ডোস:  মুরগির বয়স যখন ১৪ দিন হবে ।

 দ্বিতীয় ডোস:  মুরগির বয়স ২৮ দিন হলে ।

তৃতীয় ডোস:  ৫৬ থেকে ৮৪ দিন মুরগির বয়স হলে।

চতুর্থ ডোস: ১০৫ থেকে ১৪০ দিনের মধ্যে ।
এভাবে ৬ মাস অন্তর অন্তর রানীক্ষেত রোগের টিকা প্রদান করতে হবে । তবেই আমাদের মুরগি রানীক্ষেত হতে মুক্ত থাকবে।

টিকার নাম ও প্রয়োগের নিয়ম:

মুরগীর রাণীক্ষেত টিকা মূলত দুই ধরনের ছোট মুরগির জন্য রাণীক্ষেত টিকা হচ্ছে এক ধরনের এবং বড় মুরগির রানীক্ষেত

রোগের টিকা হচ্ছে আরেক ধরনের এবং টিকা প্রদানের ধরনেও পার্থক্য আছে । নিম্নোক্ত দুই ধরনের টিকারই বিস্তারিত

আলোচনা করা হলো।

মুরগির রানীক্ষেত ভ্যাকসিন নাম :

মুরগির ছোট বাচ্চার জন্য বিসিআরডিভি টিকা প্রদান করতে হয়। এই টিকা প্রদানের জন্য ৬ মিলিয়ে নিতে হবে । পানি যেন

অবশ্যই বিশুদ্ধ হয় সবচেয়ে ভালো হয় ডিসটিল পানি হলে। প্রথমে   ২মিলি পানি বোতলের ভিতর প্রবেশ করে সেটা ভালো

করে নেড়ে চেড়ে নিতে হবে। পরবর্তীতে  ৬ মিলি পানির সাথে মিশিয়ে ড্রপ এর সাহায্যে এক ফোঁটা করে চোখে  প্রদান

করতে হবে।

আরডিভি- RDV:

আরডিবি হচ্ছে মূলত বড় মুরগির রানীক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন । প্রথমে আমরা দুই মিলে পানি নিয়ে বোতলের ভিতর দিয়ে

সেটা ভালোভাবে ঝাকিয়ে সেটা ১০০মিলি পানির সাথে মিশিয়ে নিব। কারণ প্রতি ভায়ালে ১০০ মুরগির টিকা থাকে। প্রতি

মুরগিকে ১ মিলি হারে, রানের মাংসে প্রয়োগ করতে হবে। এবং প্রতি ৬ মাস  অন্তর অন্তর এই রোগের ভ্যাকসিন প্রদান

করতে হবে। যে  বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সেটা হলো  পানি যেন অবশ্যই বিশুদ্ধ হয়। সবচেয়ে ভালো হয় ডিস্টিল ওয়াটার

হলে।

রানীক্ষেত রোগের চিকিৎসা

সাধারণত মুরগির রানীক্ষেত রোগ হওয়ার পর কোন চিকিৎসা নেই । তাই এ রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলে আগেই ভ্যাকসিন

দিয়ে রাখা । আর যদি আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে

। আক্রান্ত মুরগি পুড়িয়ে ফেলতে হবে । আর সেই সাথে ভিটামিন জাতীয় খাবার দিতে হবে । বিভিন্ন সমীক্ষা পর্যালোচনা

করলে দেখা যায় ভিটামিন দেয়ার এর ফলে মৃত্যুর হার ৩% কমে যায়। আর মুরগির ভেতর কিছুটা হলেও রোগ প্রতিরোধ

ক্ষমতা বেড়ে যায়।

রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা এর শেষকথা

আপনি যদি রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা  লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আপনার মুরগির

রানীক্ষেত রোগের বিস্তারিত জেনে গেছেন আর যদি কোন কিছু জানার থাকে তবে আমাদের জানাবেন আমরা আপনার

প্রশ্নের উত্তর দিবো একটু কষ্ট করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের কাম্য

আমাদের অন্যান্য বিষয় পড়তে পারেন:

About 24 Favor

Check Also

Meeting minutes writing format

Meeting minutes writing format: Who has engaged with NGO job maximum people need writings this …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *