গামবোরো রোগের কারণ টিকা চিকিৎসা:-গামবোরো রোগ হচ্ছে, মুরগির আরেক মহামারী রোগ। সাধারণত এটি একটি
ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগের ভাইরাসের নাম ভিরনা ভাইরাস। এই রোগের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়
সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ডেলোয়ারি স্টেটের গামবোরো নামক স্থানে সর্বপ্রথম এই রোগের সংক্রমিত হয়। আবার অনেক
সময় যেহেতু মুরগির গ্রন্থিতে বার্সাকে আক্রান্ত করে তাই একে ইনফেকশাস ডিজিজ বলা হয়ে থাকে।
গামবোরো রোগের কারণ- Causes of Infectious Bursal Disease
গামবোরো রোগের কারণ টিকা চিকিৎসা: গামবোরো রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে, এই রোগের ভাইরাস বিভিন্ন মাধ্যমে
ছড়িয়ে পড়ে । ছোট বাচ্চা ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ থাকলে তখন এই রোগ তীব্রতর হয়। গামবোরো রোগ ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম
আক্রান্ত মুরগির পায়খানা যা বিভিন্ন মাধ্যম যেমন পরিবেশে, পানি ,খাবার, খাবারের পাত্র, সহ অন্যান্য মাধ্যমে আক্রান্ত
মুরগি থেকে অন্যান্য মুরগির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । তাই একটি মুরগির রোগ দ্বারা আক্রান্ত হলে অন্যান্য মুরগির আক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
গামবোরো রোগের লক্ষণ- Symptoms of Infectious Bursal Disease
এই রোগ হলে যেসকল লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় বা যেসকল লক্ষণ গুলো দেখলে আপনি বুঝবেন আপনার মুরগির
গামবোরো রোগ হয়েছে সেই লক্ষণ এর নিচে উপস্থাপন করা হলো।
- এই রোগ হলে মুরগি পালক এলোমেলো থাকে।
- মুরগির পায়খানা পাতলা থাকে।
- পায়খানা বেশি রকমের চুনার মত হয়।
- মুরগি পানি শূন্যতায় ভোগে।
- মুরগি এক জায়গায় নীরবে বসে থাকে।
- শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং অনেক সময় কাঁপতে থাকে।
- মুরগি আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়ে।
- মুরগি পানী ও খাদ্য গ্রহণ করতে চায় না।
- অনেক সময় মুরগির পাঁ ভেঙে যায়।
এছাড়াও অনেক সময় আমরা মুরগিকে কেটে/ ল্যাবে নিয়ে মুরগির গামবোরো রোগ হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে পারি।
এ সময় যে লক্ষণগুলো দেখলে গামবোরো রোগ হয়েছে বুঝবো তাহলো।
- মুরগির মাংসের উপর রক্তের ছোট ছোট গোটার মতো দেখা যায়।
- মুরগির গিলা ফুলে যায় এবং ভিতরে রক্ত বা পুঁজ দেখা যায়।
- মুরগির বৃক্ক ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
গামবোরো রোগের চিকিৎসা- Treatment for Infectious Bursal Disease
যেহেতু এ রোগটি ভাইরাসজনিত রোগ । তাই এ রোগের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে দ্বিতীয়বারের সংক্রমণ ঠেকানোর
জন্য নিম্নোক্ত চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে । প্রথমত অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন দেওয়া যেতে পারে। এর সাথে
ভিটামিন-সি দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
গামবোরো রোগ থেকে বাঁচার উপায়- Prevention of Infectious Bursal Disease
গামবোরো রোগ যেহেতু ভাইরাস জনিত রোগ তাই এই রোগের যেহেতু চিকিৎসা নেই এ রোগের প্রতিরোধক ব্যবস্থা হচ্ছে
উত্তম। প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে দুই ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
- টিকার মাধ্যমে।
- জৈবিক বা সাধারণ ব্যবস্থা।
গামবোরো ভ্যাকসিনের নাম
এই রোগ থেকে মুরগি বাঁচাতে হলে প্রতিরোধ হিসেবে এই রোগের জীবন্ত টিকে ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চাকে
টিকা দেওয়ার আগে এন্টিবডির মাত্রা জেনে নিতে হবে। সাধারণত ১৪ দিনের বাচ্চাকে ড্রপ এর মাধ্যমে বা খাওয়ার পানির
মাধ্যমে এই টিকা দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে বুস্টার ডোজ দিতে হয় । তাতে মুরগির রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।
জৈবিক বা সাধারণ ব্যবস্থা- Prevention by Natural
এ রোগের প্রতিরোধ আমরা জৈবিক ভাবেও করতে পারি। আর বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে সহজেই রোগের প্রতিরোধ করা যায়।
- খামার সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ।
- খামারে ভিতরে বাহিরের লোক প্রবেশ করতে না দেওয়া।
- খামারে ভিতরে বাহিরের পাখি বা মুরগি সহ অন্যান্য প্রাণী ঢুকতে না দেয়া।
- খামারে ব্যবহৃত জিনিস বাহিরে ব্যবহার না করা।
- খামারে ব্যবহৃত সকল জিনিস ভালোভাবে পরিষ্কার করা যাতে জীবাণুমুক্ত থাকে।
- জীবানু মুক্ত খাবার পানি সরবরাহ করা।
- রোগমুক্ত খাবার প্রদান করা।
- একই বয়সী মুরগি খামারে পালন করা।
- খামারের প্রবেশদ্বারে জীবাণুমুক্তকরণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
উপরোক্ত টিকা ও জৈবিক মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে আমরা সহজেই আমাদের মুরগিকে গামবোরো রোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারবো।
শেষ কথা – End word
পরিশেষে বলা যায় যেহেতু, গামবোরো একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ । আর এই রোগ থেকে আমরা সহজেই মুক্ত
থাকতে পারি, শুধু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে । যেটা আমাদের শ্রম এবং অর্থ সাশ্রয় করে থাকে। তাই মুরগিকে
সঠিক সময়ে গামবোরো রোগের টিকা দিয়ে এবং যে ব্যবস্থা গুলো উপরোক্ত উল্লেখ আছে সেগুলো পালনের মাধ্যমে
গামবোরো রোগ থেকে আমাদের মুরগিকে রোগ মুক্ত রাখতে পারবো। গামবোরো রোগ সহ মুরগির অন্যান্য সকল বিষয়ে
জানতে আমাদের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দিব।
অনেক অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য।
No Responses