Skip to content

মুরগির ফাউল পক্স রোগ বিস্তারিত- Chicken fowl pox Disease Details

মুরগির ফাউল পক্স রোগ বিস্তারিত

মুরগির ফাউল পক্স রোগ বিস্তারিত- আমাদের দেশে বর্তমানে ব্যাপকভাবে মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। অনেক বেকার যুবক বা যুবতি গড়ে তুলেছেন ছোট কিংবা বড় ধরনের খামার । কিন্তু বেশির ভাগ খামারিদের মুরগি পালনে ভালো ধারণা না থাকার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। খামারিরা আশানুরূপ ডিম ও মাংসের  উৎপাদন করতে পারেনা।

আর এর জন্য প্রধান অন্তরায় হলো মুরগির রোগ। মুরগির অনেক ধরনের রোগ বালাই পরিলক্ষীত হয় তার মধ্যে মুরগির ফাউল পক্স অন্যতম ।  আজকে আমরা জেনে নিব মুরগির ফাউল পক্স রোগের লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মুরগির ফাউল পক্স কি?

এই রোগটি হলো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত একটি রোগ। এই রোগ সাধারণত মুরগির যে অংশে পালক বিহীন থাকে সেই স্থানে সংক্রমণ বেশি ঘটে। যখন এই রোগ দেখা দেয় তখন প্রথমে আক্রান্ত জায়গায় শক্ত ও গোটা হয় এর পরবর্তীতে শরীরে জ্বর দেখা যায় এবং সেই সাথে মুরগির  নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে।

মুরগির সাধারণত  ফাউল পক্স দুই ধরনের হয়ে থাকে। সেগুলো হলো-১. ‍শুকনো পক্স ২. ভিজা পক্স । নিচে দুই ধরনের পক্স বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

শুকনো পক্স

শুকনো পক্স হলো এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ । এই রোগ সাধারণত মুরহগির যে অংশ পালকবিহীন সেই অংশে দেখা যায়। এই রোগ সাধারণত মুরগির  চোখের পাতা ও জুটিতে হয়ে থাকে। এই রোগ বড় মুরগির হলে তেমন একটা  ক্ষতির প্রভাব ফেলতে পারে না । তবে বাচ্চাদের মুরগির এই ফাউলপক্স উঠলে তাহলে সময় মত চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে বাচ্চা মারা যায়।

ভিজা পক্স

যখন মুরগির ভিজা পক্স হয় তখন মুরগির চোখ মুখ, মুখ গহবর থেকে শুরু করে  শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে। এক্ষেত্রে  বড় মুরগির উপর তেমন  কোন প্রভাব না ফেলেও বাচ্চা মুরগির ক্ষেত্রে  প্রবাহিত করে। শরীরে জ্বর দেখা যায়, মুরগির চোখ মুখ ঢেকে যায় আস্তে আস্তে মুরগি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

সংক্রমনের কারণ

পক্স সাধারণত ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে বা বিভিন্নভাবে এই রোগ সংক্রমিত হতে পারে ।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

  • পোকার কামড়ে এর বিস্তার ঘটতে পারে।
  • মাছি ও মশার মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার  ঘটতে পারে।
  •  একটি আক্রান্ত মুরগি থেকে অন্য মুরগির হতে পারে ।
  • তাছাড়া ও আক্রান্ত মুরগির পালক, পালকের অংশ, লালা এবং রক্তের মাধ্যমে বিস্তার ঘটতে পারে।
  • খাবার পাত্র বা ব্যবহৃত আসবাবপত্র হতে এই রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে।

ফাউল পক্স রোগের লক্ষণ

মুরগির ফাউল পক্স রোগ বিস্তারিত

মুরগির ফাউল পক্স রোগ বিস্তারিত

যখন এই রোগটি বড় মুরগি বা ছোট মুরগির হয় তখন খুব সহজেই বুঝা যায় । তাছাড়া নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি লক্ষণ বর্ণনা করা হল-

  1. চোখের পাতায় ও জুটিতে ছাই রঙের মতো উঠে যা  আস্তে আস্তে বড় হয়ে হলুদ আকার ধারণ করে।
  2. পরবর্তীতে কাল আঁচিলের মতো হয়।
  3. মুরগির শ্বাসতন্ত্র ও চোখমুখে এই দাগ দেখা যায়।
  4. মুরগির দুর্বল হয়ে পড়ে, খাবার খাওয়ার কমে যায়। ধীরে ধীরে মারা যায় ।
  5. মুরগির ডিম পারা বন্ধ করে।
  6. মুরগির ওজন কমে যায় ও বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
  7. মুরগির চোখ অন্ধ হয়ে যায়।

মুরগির ফাউল পক্স প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কথায় আছে রোগ নিরাময় থেকে রোগ প্রতিরোধ উত্তম। তাই আসুন আমরা জেনে নেই কিভাবে মুরগির ফাউল পক্স কে খুব সহজেই  প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

  • নিয়মিত ফাউল পক্স এর টিকা প্রদান করতে হবে ।
  •  টিকা প্রদান ব্যক্তি অবশ্যই পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক হতে।
  •  আক্রান্ত মুরগি অবশ্যই আলাদা রাখতে হবে ।
  • খামারে দর্শনার্থী সীমাবদ্ধ করতে হবে ।
  • খামারে যাওয়ার আগে জীবানুনাশক দ্বারা জীবানুমুক্ত হতে হবে।
  • খাবার পাত্র সহ অন্যান্য ব্যবহার করা জীনিস পত্র জীবানু মুক্ত রাখতে হবে।
  • খামার মশা মাছি মুক্ত রাখতে হবে।
  • খামার সবসময়ই পরিস্কার পরিছন্ন রাখতে হবে।
  • মাঝে মাঝে খামারে জীবানুনাশক স্প্রেকরতে হবে।

ফাউল পক্স রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা

আমরা জানি ফাউল পক্স ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগের সঠিক কোনো চিকিৎসা নেই। এজন্য পূর্বেই টিকা প্রদান করতে হবে। আর যদি এ রোগ হয়ে যায় তবে কালোজিরা খাওয়ানো যেতে পারে এবং আক্রান্ত স্থানে  পটাশের পানি দিয়ে ধৌত করে তার মধ্যে ঘন করে পটাশ লাগিয়ে দিতে হবে। খামার বা বাড়ীর মধ্যে কোন মুরগি আক্রান্ত হলে সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে।

ফাউল পক্স রোগের ভ্যাকসিন

এই ভ্যাকসিন ২০০ মাত্রায় কঠিন অবস্থায় বায়ুশূন্য বোতলে সংরক্ষিত গোলাপী রং এর থাকে। বিশুদ্ধ ১০ মি:লি পানির সথে সবটুকু সবটুকু ঔষধ ভালোভাবে মিশিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে। এরপর ২৮ থেকে ৩২ দিন বয়সের মুরগির পাখনার নিচে পালকবিহীন স্থানে চার থেকে পাঁচটি খোচা দিয়ে ভ্যাকসিন লাগিয়ে দিতে হবে।

যদি চার পাঁচ দিন পর খোঁচা দেওয়া জায়গা ফুলে ওঠে তাহলে বুঝতে হবে ভ্যাকসিন কাজ করছে । আর যদি ফুলে না উঠে তাহলে বুঝতে হবে ভ্যাকসিন কাজ করে নাই। এবং পুনরায় আগের নিয়ম অনুসারে ভ্যাকসিন দিতে হবে। আমাদের প্রতি বছর একই সময়ে এই ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।

শেষ কথা

যেহেতু ফাউল পক্স মুরগির ভাইরাস ঘটিত রোগ। এ রোগের সঠিক কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নাই। তার জন্য টিকা প্রদান পদ্ধতি হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা। যেহেতু টিকা প্রদানের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুরগিকে নিরাপদে রাখা যায়। সে জন্য আমরা নিয়মিত মুরগিকে টিকা প্রদান করব। মুরগির পালন ও অন্যান্য রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা সম্পের্কে জানতে

আমাদের আরো লেখা আছে সেগুলো পড়তে পারেন সেখানে বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে। ছাড়াও আপনাদের যদি মুরগি পালন সম্পর্কে আরো কোন বিষয়ে জানার থাকে, আমাদেরকে প্রশ্ন করতে পারেন। পরবর্তীতে আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবো।

কষ্ট করে এই লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

     একই  বিষয় পড়তে পারেন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Share Buttons and Icons powered by Ultimatelysocial