উচ্চ রক্ত চাপ : বর্তমান সময়ে ব্লাড প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ কমন একটি সমস্যা । আমরা অনেকেই প্রায় সময় এই
সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। কিন্তু একটু সচেতন থাকলেই আমরা খুব সহজেই এই ধরনের সমস্যা থেকে নিজেরা পরিত্রান
পেতে পারি । আজকে আমি আমার এই আলোচনায় আপনাদের সাথে সেই সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যে
বিষয়গুলো আমাদের জানা খুবই প্রয়োজন, এবং এই বিষয়গুলো জানলে আমরা উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়? উক্ত উচ্চ রক্তচাপ
কি? এ থেকে পরিত্রাণের উপায়,সমস্ত বিষয়ে সুন্দর একটি ধারণা পাব। তাই যাদের এই সমস্যাটি আছে তাদের জন্য
আজকের এই উচ্চ রক্ত চাপ আমার আলোচনাটি হতে যাচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনা। তাই প্রথম থেকে শেষ
পর্যন্ত লেখাটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
উচ্চ রক্ত চাপ কি?/ উচ্চ রক্তচাপ কাকে বলে?
ইংরেজীতে যাকে বলে Hypertension বা উচ্চ রক্ত চাপ । যার সংক্ষিপ্ত নাম হচ্ছে HTN বা HPN। সাধারণত যখন মানব
শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে রক্তের চাপ বেশি থাকে তখন তাকে Hypertension বা উচ্চ রক্ত চাপ বলে। রক্ত চাপ মাপার জন্য
সাথারণত দুটো প্যারামিটার ব্যবহার করা হয় সিস্টোলিক রক্ত চাপ যেটাকে আমরা অনেকেই উপরের চাপ বলে থাকি
আরেকটি হচ্ছে ডায়াস্টলিক চাপ যে টাকে আমরা নিচের রক্ত চাপ বলে থাকি। যদিও ডাক্তারদের মধ্যে উচ্চ রক্ত মাপারে
মধ্যে একটু মতভেদ রয়েছে তবুও আমরা বলতে পারি কারো যদি উপরের টা ১১০ থেকে ১৩০ এবং নিচের টা ৭০ থেকে ৯০
থাকে তবে তাকে স্বাভাবিক রক্ত চাপ বলা যায়। আর এর বেশি হলেই তাকে আমরা উচ্চ রক্ত চাপ বলতে পারি। তবে একটি
বিষয় লক্ষ্য রাখতে হঠাৎ কোন কারণে রক্তের চাপ বেড়ে গেলেই তাকে আমরা উচ্চ রক্ত চাপের রোগী বলতে পারি না। এই
সমস্যা হঠাৎ করে অন্য কোন ধরনের কারণেও হতে পারে। তবে যদি পর পর তিন মাস উচ্চ রক্ত চাপ স্থায়ী হয় তবে তাকে
আমরা উচ্চ রক্ত চাপ বলতে পারি।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ
এটা হওয়ার জন্য অনেক গুলো বিষয় দায়ী। এই রোগটি একেক জনের একেক কারণে হতে পারে। আর এর জন্য যে বিষয়
গুলো সাধারণত দায়ী তাহলো অধিক হারে লবন খাওয়া , টেনশন বা দূশ্চিন্তা করা, বয়ষ, বংশগত কারণ সহ যদি কেহ
দীর্ঘদিন যাবত কোন জটিল রোগে ভূগে থাকেন তবে তবে এই রোগ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
এই রোগের লক্ষণ খুব একটা বেশি দেখা যায় না । এটি শরীরে নিরব ঘাতকের ন্যায় শরীরে বাসা বেঁধে থাকে। তাই বয়স যখন
৪০ পার হয়ে যায় নিয়মিত প্রেসার মাপানো প্রয়োজন। প্রয়োজনে বাড়িতে একটি প্রেসার মেশিন কিনে নিতে পারেন। যদিও
এই রোগের লক্ষণ খুব একটা প্রকাশ পায়না তবুও যদি নিচের এই লক্ষণ গুলো আপনার দেখা দেয় তাহলে খুব তাড়াতড়ি
ডাক্তারের নিকট যাওয়া উচিৎ।
ঘাড় ব্যাথা:
সবসময় ঘাড় ব্যাথা হলেই যে আপনার উচ্চ রক্ত চাপ হয়েছে এটা ভাবার কোন কারণ নেই। ঘাড় ব্যাথা উচ্চ রক্ত চাপের একটি অংশ মাত্র। তাই এই লক্ষণ দেখা যাবার সাথে সাথে আপনি আপনার প্রেসার মেপে নিতে পারেন।
মাথা ব্যাথা
যদি কোন কারণে আপনার মাথা ব্যাথা দেখা যায় তবে আপনি ধরে নিতে পারেন যে আপনার উচ্চ রক্ত হয়েছে তবে আপনি সাথে সাথে পরিক্ষা করে নিতে পারেন। যদি দেখা যায় আপনার প্রেসার বেশি তবে আপনার উচ্চ রক্ত চাপ হয়েছে। তবে সব মাথা ব্যাথাই উচ্চ রক্ত চাপের কারণ নয়।
ঘুম কম হওয়া
ঘুম মানব শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। যদি কারো ঘুম কম হয় তাহলে শরীরে দেখা যায় নানান মুখি সমস্যা। তাই ঘুম কম হলে বা কম হওয়াও উচ্চ রক্ত চাপের অংশ বা কারন। তাই যদি আপনার নিয়মিত ঘুম কম হয় তাহলে আপনার ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
অচেতন হয়ে পড়ে যাওয়া
যদি বিশেষ কোন কারণ ছাড়া অনেক সময় অচেতন হয়ে পড়ে যায় তবে বুঝতে হবে আপনার উচ্চ রক্ত চাপ হবার সম্ভাবনা আছে। তাই এই ধরনের সমস্যা হলে আপনাকে সচেতন হতে হবে।
মেজাজ খিট খিটে হয়ে যাওয়া
যাদের শরীরে উচ্চ রক্ত চাপ থাকে তাদের মেজাজ সবসময় খিট খিটে থাকে। আর তােই যদি হঠাৎ করে আপনার মেজাজ খিট খিটে হয় তখন আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
খুব তাড়া তাড়ি রেগে যাওয়া
যাদের বয়স অনেক বেড়ে যায় বা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায় তাদের মেজাজ খুব তাড়াতাড়ি উত্তেজীত হয়ে পড়ে। তাই তাড়া তাড়ি রেগে যায় । আর আপনার যদি এই ধরনের সমস্যা দেখা যায় তবে অনেকটা অনুমান করা যায় আপনার উচ্চ রক্ত চাপ হবার সম্ভাবনা আছে।
সবার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করা
যাদের রক্ত চাপ বেশি তারা সমসময় উত্তেজীত থাকে। যার কারণে তারা সবার সাথেই খারাপ করতে থাকে। এর ফলে দেখা যায় তাদের সাথে সমাজে অনেক বেশি ঝগড়া হয়ে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী কোনটি
এটা আসলে বলা অনেক মুশকিল এই উচ্চ রক্ত চাপের জন্য দায়ী কোনটি । এর জন্য অনেক গুলো বিষয় দায়ী হতে পারে ।
আবার বিষেশ কোন রোগ বা অভ্যাসের কারনেও তা হতে পারে। তবে সাধারণত কমন যে বিষয়গুলো রক্ত চাপের জন্য দায়ী
তা আমি নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরলাম।
- অধিক লবন গ্রহণ।
- অতিরিক্ত মেধ।
- অধিক কাজের চাপ।
- অধিক মদ্য পান বা নেশা সেবন।
- পরিবারের চাপ।
- অতিরিক্ত আওয়াজ।
- অধিক ঘনবসতি বা অ-স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
- দীর্ঘ দিন রোগ ভোগ করা।
এছাড়াও অনেক সময় বংশগত কারণেও অনেক সময় উচ্চ রক্ত চাপ হয়ে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়
যদি কারো একবার উচ্চ রক্ত চাপ হয়ে যায় তবে এটা থেকে পরিত্রান পাওয়া খুবই কষ্ট করা। তাই ৪০ বছর বয়স হয়ে গেলেই
মাঝে মাঝে প্রেসার পরিমাপ করে সবসময় সজাগ থাকা খুবই জরুরী। আর রক্ত চাপের প্রথমিক পর্যায় এটা নিয়ন্ত্রন করা
সহজ হলেও অধিক হারে প্রেসার দেখা দিলে তা আর নিরাময় হয়না। সারা জীবন এই উচ্চ রক্ত চাপ বয়ে বেড়াতে হয়। আর
তাই যদি আপনার শরীরে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রক্ত চাপ মৃদু বেশি হয় তবে যে কাজ গুলো করতে হবে তা নিচে আলোচনা
করা হল।
- এই রোগের প্রথম ধাপে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে নিয়মিত ব্যায়াম করে শরীরের ওজন পরিমাপ মত রাখা।
- প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করা।
- পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করা।
- লবন কম খাওয়া।
- তৈলাক্ত খাবার যথাসম্ভব পরিহার করা।
- মাংস জাতীয় খাবার পরিহার করে শাক সব্জী বেশি খাওয়া।
- চিনি/ মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়া।
- সবসময় আনন্দে থাকার চেষ্টা করা।
- দু-শ্চিন্তা পরিহার করার চেষ্টা করা।
- নিয়মিত ঘুম পাড়া ও বিশ্রাম নেয়া।
- অধিক শব্দের জায়গা পরিহার করে নিরব জায়গায় বসবাস করা।
উচ্চ রক্ত চাপ না হবার জন্য করনীয়
রোগ যেন আমাদের শরীরে বাসা ধাঁধতে না পারে তার জন্য সজাগ থাকাই হলো সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তাই আজকের
পর থেকে আমরা সবাই সজাগ থাকবো যাতে করে আামদের কোনভাবেই এই মারাত্বক রোগটি না হয়। আর এর জন্য
আমরা যদি একটু সচেতন হই তবে এই মহা মারাত্বক মরণ ব্যাধি থেকে খুব সহজেই নিরাপদ থাকতে পারি। আর তার জন্য
আমাদের যা করতে হবে । যদি আপনি এই রোগ যেন আপনার শরীরে আসতে না পারে তার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গুলো
নিতে পারেন। তাহলে দেখবেন আল্লাহর রহমতে আপনার শরীরে আর কোন দিন এই রোগ আসতে পারবেনা।
- অধিক লবন বা কাঁচা লবন পরিহার করা বা কম খাওয়া।
- চিনি জাতীয় বা চিনি যতটুকু কম খাওয়া যায়।
- সবসময় ওজন নিয়ন্ত্রন রাখা।
- প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করা।
- বয়স ৪০ এর বেশি হলে মাঝে মাঝে প্রেসার চেক করা।
- শাক সব্জী বেশি খাওয়া ও মাংস কম খাওয়া।
একজন মানুষ যদি নিয়মিত উপরোক্ত বিষয় গুলো প্রতিনিয়ত পালন করে চলে তবে দেখা যাবে । আল্লাহর রহমতে তার
কোন দিন এই ধরনের রক্ত চাপের সন্মুখিন হতে হবে না।
উচ্চ রক্ত চাপের জন্য পরামর্শ
যদি কোন কারণে আপার শরীরে চেক আপ করার পর উচ্চ রক্ত চাপ দেখা যায় তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই যেহেতু
আপনি একটু সচেতন থাকলেই এই রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন তার জন্য আপনার প্রয়োজন উপরোক্ত নিয়ম
গুলো পালন করে নিজের জীবনকে নতুন ভাবে পরিচালিত করা। আর নিজে একটু সবধানতার সাথে জীবন যাপন করা।
তাহলেই দেখবেন জীবনে বড় ধরনের ক্ষতির সন্মুখিন হতে বেঁচে গেছেন। আর তার পরেও যদি ঠিক না হয় তাহেল অবশ্যিই
ভাল একজন ডাক্তারের সাথে আলাপ আলোচনা করে আপনি চিকিৎসা নিতে হবে। কোন ভাবেই এই রোগটিকে অবহেলা
করা যাবে না।
উচ্চ রক্ত চাপ এর শেষ কথা
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই জন্য যে আপনি অনেক কষ্ট করে এই উচ্চ রক্ত চাপ লেখাটি পড়েছেন। আমি জানি এই
লেখাটির উপদেশ যদি কেহ নিয়মিত মানে তবে সে এই মরণ ব্যাধি উচ্চ রক্ত চাপ থেকে খুব সহজেই দূরে থাকতে পারবে।
এখানে যে বিষয় গুলো বলা হয়ে হয়েছে সেগুলো ব্যাক্তি গত জীবনে নিজে পালন করবেন এবং বন্ধুদের পালন করার জন্য
উৎসাহিত করবেন। এই প্রত্যাশা নিয়েই আজকের মত এখানে শেষ করছি। আবার কথা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। সেই
পর্যন্ত অপেক্ষা করুন আল্লাহাফেজ।
আরো যে বিষয় গুলো পড়তে পারেন তাহলো :
১. জীবন নিয়ে সেরা ২৫০ টি কথা .উক্তি