আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। আর আপনাদের সুস্বাস্থ্য এবং
দীর্ঘায়ু কামনা করেই শুরু করছি আজকে একটি নতুন বিষয় নিয়ে । আর সেটা হচ্ছে কলা খাওয়ার
উপকারিতা । আমরা যারা স্বাস্থ্য সচেতন তাদের জন্য এই বিষয়টি জানা খুবই জরুরী। আপনার স্বাস্থ্য ভালো
রাখার জন্য যেসকল খাদ্য গ্রহণ করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম কলা। এর মধ্যে এমন কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে
যেগুলো মানবদেহের জন্য অতীব জরুরী । এছাড়াও বেশ কিছু বাড়তি গুণ রয়েছে যেগুলো ওষুধ কেও হার
মানায়। তাই আসুন সেই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি । যাতে করে আপনি কলা খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন। আর তাই আপনার খাবারে প্রতিদিন কলাকে অগ্রাধিকার
দেন। যেহেতু লেখাটি খুবই গুরত্বপূর্ণ তাই লেখাটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ করছি ।
যাতে আপনি কলার উপকারিতা সম্পর্কে এবং এর সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত ভালোভাবে জানতে পারেন।
আপনি যদি ভালোভাবে কোন একটা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে অবশ্যই বিষয়টি পরিপূর্ণ পড়া
উচিত। আর তাই এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। আশা করি এই লেখাটি পড়লে
কলা সম্পর্কে আপনি পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।
কলা কি? কলার জাত পরিচিতি
এটা হলে জনপ্রিয় একটি ফল এর ইংরেজী নাম Banana যার পরিচিতি রয়েছে বিশ্বব্যাপী । এই ফলটি
সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু সম্পন্ন দেশসমূহে ভাল জন্মায়। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু দেশেই কলা অন্যতম
প্রধান ফল। কলার জাতের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো , ১.কিছু কলা আছে
যেগুলো বীজ মুক্ত তার মধ্যে হলো -সবরি, অমৃতসাগর, অগ্নিশ্বর, দুধসর, সধসাগর । ২.আবার কিছু কলা
আছে যেগুলোর মধ্যে সাধারণত দু-একটি বীজ থাকে তার মধ্যে আছে-চাম্পা,চিনিচম্পা,কবরী,চন্দন
কবরী,জাবকাঠালী । ৩.কিছু কলার মধ্যে অনেক বীজ থাকে আর সেগুলো হলো- বাতুর আইটা,গোমা
, সাংগী আইটা । ৪.আনাজী কলার মধ্যে রয়েছে – ভেড়ার ভোগ, চোয়াল পউশ,বর ভাগনে,
বেহুলা,মন্দিরা,বিয়েরবাতি ।
কলা কোথায় পাওয়া যায়?
কলার জন্ম মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াই কলার উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিগণিত। বাংলাদেশের সকল জেলাতেই
কমবেশি জাত অনুযায়ী কলার চাষ হয়ে থাকে । তবে যে সকল জেলায় কলার ভাল ফলন হয় তার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য জেলা সমূহ হলো- নরসিংদী,মুন্সীগঞ্জ,ময়মনসিংহ,যশোর, বরিশাল,বগুড়া,রংপুর,জয়পুরহাট
,কুষ্টিয়া,ঝিনাইদহ,চুয়াডাঙ্গা,মেহেরপুর । কলাচাষের সবচেয়ে সুবিধা হলো এটা সারা বছর চাষ করা যায় আর
তাই বর্তমানে পাহাড়ী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে কলার চাষ হচ্ছে । আর এর সাথে কিছু পাহাড়ী বুনজ কলাও
আছে যেগুলো বাংলা কলা ও মাামা কলা হিসেবে পরিচিত।
কলায় পুষ্টির মান সমূহ
কলার যদি পুষ্টির দিক দিয়ে বিবেচনা করা হয় তাহলে বালা যায়। ভাল মানের একটি ১০০ গ্রাম কলায় যে
পরিমাণে পুষ্টি মান থাকে তা নিম্নে তালিকা আকারে প্রদান করা হলো।
১. ক্যালরির পারিমাণ রয়েছে-৮৯
২. ফ্যাটের পরিমাণ আছে-০.৩ গ্রাম
৩. সোডিয়াম থাকে-১ মিলিগ্রাম।
৪. কলায় আছে পটাসিয়াম-৩৫৮ মিলিগ্রাম।
৫. কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ-২৩ গ্রাম
৬. প্রোটিনের মাত্রা-১.১ গ্রাম।
৭. ভিটামিন এ -১ ভাগ।
৮. ভিটামিন সি -১৪ ভাগ।
৯. আয়রন আছে-১%
১০. বি৬ ভিটামিন আছে-২০%
১১. ম্যগনেসিয়াম আছে- ৬%
কলা খাওয়ার নিয়ম
কলা খাওয়ার তেমন একটা ধরাবাধাঁ নির্দিষ্ট নিয়ম নেই । আপনি দিনের যেকোনো সময় কলা খেতে পারেন।
তবে যখনই কলা খান খাবার পরে ফল খেলে সে ক্ষেত্রে পুষ্টি টা একটু বেশি পাবেন। অবশ্যই কলা খাওয়ার
পরেই সাথে সাথে পানি জাতীয় কোনো কিছু খাবেন না। এতে করে শরীরের পুষ্টির পরিমাণ কমে যাবে।
অনেক পুষ্টিবিদ সাজেশন করে থাকেন কলা সবচেয়ে সকালবেলায় খেলে পুষ্টি গুণ বেশি পাওয়া যায়।
যেহেতু সারাদিন শরীরে শক্তির প্রয়োজন, সেই শক্তিগুলো সহজেই যোগান দিয়ে থাকে কলা। তাই
সকালবেলায় যারা ব্যায়াম করেন তারা যদি সকালবেলায় কলা খায় সে ক্ষেত্রে শরীরে শক্তির পরিমাণ বেশি
পাওয়া যায়। যেহেতু কলাতে প্রচুর ক্যালরি আছে তাই সারাদিন কাজ করার জন্য সকালবেলায় কলা খাওয়া
সবচেয়ে উত্তম।
কলা খাওয়ার উপকারিতা / পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা
এটা হচ্ছে অনেক পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি ফল। এই ফলটি পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রধান ফল হিসেবে বিবেচ্য
। তাছাড়াও কলার পুষ্টিগুণ ও এর স্বাদের কারণে ছোট বড় সকলের কাছেই কলা বেশ জনপ্রিয়। যেহেতু
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ আর তাই কলা খেলে যে সকল উপকার হয় সেগুলো বিস্তারিত নিচে
তুলে ধরা হলো।
কলা খেলে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিপায় বা ত্বক ভাল থাকে
কলা খেলে ত্বকের জন্য খুবই ভাল এই বিষয়টি প্রমান করেন যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ এবং দ্যা ক্যান্ডিডা বইয়ের
লেখক সিসা রিচার্ড তার ওয়েবসােইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন ‘’ একটি মধ্যম সাইজের কলাতে
প্রতিদিনের চাহিদার ১৩ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ থাকে। যা প্রতিদিনের খাবারের তুলনায় যথেষ্ট। লেখকের মতে
ম্যাঙ্গানিজ গ্রহণ করার ফলে ত্বকের উন্নতি করতে সহায্য করে। আর এই ম্যাঙ্গানিজ শরীরে কোলাজেন
তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আর তাই ম্যাঙ্গানিজ কোলাজেন তৈরির গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা তারুণ্য
ধরে রাখে।
মলাশয়ের সুস্থতা রক্ষায় কাজ করে এই কলা
কেউ যদি তার মলাশয় সুস্থ রাখতে চায় তাহলে যেন কলা খায়। কারণ নিউ ইয়র্কয়ের পুষ্টি পরামর্শক ও
সুস্থতা-বিষয়ক ওয়েবসােইট দ্যা আনউইন্ডার’য়ের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জন ফকস ২০১৭ সালে এক পুষ্টি
গবেষণায় বলেন কলায় প্রতিরোধী শ্বেতসার বলে কিছু আছে। এটাকে শুনতে নিতিবাচক মনে হলেও এটি শর্ট
চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড উৎপাদনে সহায়তা করে যা মলাশয়ের সুস্থতার জণ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন
করে।
কলা খেলে পেশির টান পড়া কমায়
আমাদের যাদের পেশি টান পড়ে বা পড়ার সমস্যা বিদ্যমান তাদের জন্য কলা ওষুধের মত কাজ করবে।
কারণ কলার মধ্যে আছে ইলেক্ট্রোলাইট যা দেহকে আর্দ্র রাখে। একই সাথে দেহের খনিজের ভারসাম্য বজায়
রাখতে সহায়তা করে। যেহেতু দেহ অর্দ্র থাকে তাই সহজে পেশিতে টান পড়েনা বা টান পড়তে দেয় না।
লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে কলা
মানব শরীরে লবণের ভারসাম্য রক্ষায় কলার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ কলার মধ্যে আছে পটাশিয়াম।
যেহেতু কলার মধ্যে পাটাশিয়াম আছে তাই এটা পটাশিয়ামের ভাল একটি উৎস। নিউইয়র্ক’য়ের ইন্সটিটিউট
অফ কালিনারি এডুকেশন এর পুষ্টি বিভাগের পরিচালক সেলিন বিচম্যান ব্যাখা করেছেন যে ‘’ কলার
পটাসিয়ামের মাত্রা সামগ্রিক খাদ্যতালিকাগত স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে যদি অন্য
খাবারের সঙ্গে লবণ বেশি খাওয়া হয়ে থাকে” তিনি এর সাথে আরো বলেন ‘ভাল মাত্রায় পটাশিয়াম খাবার
তালিকায় যোগ করা হৃদ স্বাস্থ্য ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি
কমে”
কলা খেলে ওজন নিয়ন্ত্রন হয়
কলার মধ্যে থাকা ক্যালরি শরীরের ক্ষুদার ভাব কমায় যার কারণে কলা খেলে খাদ্য কম লাগে। আর যেহেতু
কলা খাওয়ার কারণে খাদ্য কম লাগে তাই শরীরের অপ্রয়োজনীয় শর্করা কম গ্রহণ হয় যার কারণে ওজন
নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর পুষ্টিবিদ ম্যারি রিটজের মতে ‘’ অন্যান্য ফলের
তুলনায় কলাতে চিনি ও ক্যালরির পরিমাণ বেশি বলে খ্যাতি রয়েছে। তবে এতে পর্যাপ্ত আঁশ ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা ওজন কমাতে সহায়ক”
বাচ্চাদের কলা খায়ানোর উপকারিতা
কলা বেশির ভাগ বাচ্চাদেরই পছন্দের খাবার। কারণ এটা খাওয়া যেমন সহজ তেমন এটা খুবই সু-স্বাদু । আর
তাই বাচ্চারা এটা খেতে খুবই ভালবাসে। এছাড়াও এটা খাওয়ানো সহজ বিধায় বাচ্চার মায়েরা এটা খাওয়ে
থাকে। কিন্তু এর পুষ্টি গুন জানলে আজ থেকে আরোবেশি অগ্রহী হবে কলা খাওয়ানর জন্য। বিশেষ করে যে
সকল শিশু মায়ের বুকের দুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে তাদের জন্য আরো ভাল কলা খাওয়া।
কলা খাওয়ার ফলে বাচ্চাদের যে সকল উপকার হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. কলার মধ্যে রয়েছে ফাইবার যা বাচ্চাদের অন্ত্র পরিস্কার করতে সহায্য করে।
২. বাচ্চাদের মূত্র সংক্রমের হাত থেকে রক্ষা করে। কারণ এর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে বিষাক্ত পদার্থ পরিস্কার করে থাকে।
৩. এর মধ্যে রয়েছে পটাসিয়াম,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,লোহা ,ফোলেট,নিয়াসিন এবং ভিটামিন বি৬ যা শিশুদের জন্য খুবই প্রয়োজন।
৪. এর বিভন্ন পুষ্টি গুনের কারনে বাচ্চাদের হাড় মজবুত করে ।
৫. কলা রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে করে বিধায় অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে।
৬. এটার মধ্যে রয়েছে ফোলেট যা মস্তিস্কের বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।
৭. বাচ্চাদের কলা খাওয়ালে দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৮. কলার মধ্যে ফাইবার থাকার ফলে বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিকার করে।
দুধ ও কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা জানি দুধ এবং কলা উভয়ই স্বাস্থ্যর জন্য উপকারি। তবে অনেকেরেই মনে প্রশ্ন দুধ কলা এক সাথে
খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। নাকি উপকার না হয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি থাকে। আজ আমার এই
আলোচনা দ্বারা আপনাদের বিষয়টি পরিস্কার করবো। দুধের মধ্যে যেমন রয়েছে অনেক গুলো পুষ্টিগুন
তেমনি কলার মধ্যেও রয়েছে অনেকগুরো পুষ্টিগুন। আর যার কারণে অনেকের ধারনা এই দুইটা একসাথে
খেলে পুষ্টিগুন বেড়ে যাবে বহুগুনে। কিন্তু আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে দুধ এবং কলা একসাথে না
খাওয়াই উত্তম। কারণ তাদের মতে তরল জাতীয় খাবারের সাথে ফল জাতীয় খাবার খেলে এতে পুষ্টির
পরিমাণ কমে যায়। একই সাথে কিছু সাইড ইফেক্ট দেখা যায়, যেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই তারা তাদের
গবেষণায় ফলাফলে দেখিয়েছেন কলা ও দুধ আলাদা খাওয়াই উত্তম। দুধ ও কলার মিশ্রণ আদর্শ মনে হলেও
সত্যিকার অর্থে এরা একে অপরের পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করে। সাধারণত দুধে খাদ্যআঁশ নেই, যা কলায় আছে।
তাই দুধ ও কলা একসঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে একই ধরনের কাজ করে না বরং শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
রাতে ফল খাওয়ার বিষয়ে অনেকেরই নানান মত আছে। বিশেষ করে রাতে কলা খেতে মানা করেন
অনেকেই। প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ এই ফল দেহের জন্যে দারুণ উপকারি উপদান হিসেবে কাজ
করে। কিন্তু এটা রাতে যদি আমরা রাতে খাই তবে কী সমস্যা? আয়ুর্বেদ তাদের মতামতে বলে, রাতের সময়
কলা খাওয়া বিপজ্জনক নয়। যেহেতু কলা ঠাণ্ডা ফল। তাই যাদের সর্দির সমস্যা আছে তাদের কলা রাতে না
খাওয়াই ভালো। তাছাড়া এটি হজম হতে বেশ সময় নেয়। অনেক পুষ্টিবিদদের মতে, কলা এমন একটি ফল
এটা খুবই স্বাস্থ্যকর। কলা দেহের প্রচুর শক্তি দেয়। তবে সর্দি লেগে থাকলে এবং অ্যাজমার সমস্যা থাকলে
রাতে না খাওয়া ভাল। তবে যারা ব্যায়াম করবে তারা যদি ব্যায়ামের পর এবং সকাল-বিকালে খেলে কোনো
সমস্যা নেই। এতে আছে প্রচুর পটাশিয়াম। কাজেই ক্লান্তিকর দিনের পর রাত্রে গভীর ঘুমের জন্যে কলা
উপকারি হতে পারে। আর পেশিকে আরাম দেয় পটাশিয়াম। অনেক গবেষনায় দেখাগেছে সন্ধ্যা বা
বিকালের দিকে একটি-দুটি কলা খেলে রাতে ভালো ঘুমের প্রস্তুতি নেয় আমাদের দেহ। মোটামুটি একটি বড়
সাইজের একটি কলায় রয়েছে ৪৮৭ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। আমরা যারা প্রাপ্তবয়স্ক তাদের দেহে প্রতিদিনের
চাহিদার ১০ শতাংশ সরবরাহ করে এই সাইজের একটি কলা। একটি কলায় রয়েছে মাত্র ১০৫ ক্যালোরি।
কাজেই আপনি যদি ডিনারে ৫০০ ক্যালোরির কম গ্রহণ করতে চান তো এক কাপ দুধ আর দু’টো কলা খেয়ে
ফেলতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
একজন মা যখন গর্ভাবস্থায় থাকে তখন তাকে দুজনের খাবার খেতে হয়। আর তাই ডাক্তার এ সময়
মায়েদের বেশি বেশি পরিমাণ ভিটামিনের পরিমাণ যে খাদ্য বেশি সেই সব খাবার বেশি খেতে বলে। আমরা
উপরের কলার পুষ্টি গুন বিবেচনা করলে দেখতে পাই অন্যান্য ফলের তুলনায় কলায় যথেষ্ট পরিমাণে
রয়েছে। আর তাই গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া খুবই প্রয়োজন। একজন মা যদি এই অবস্থায় কলা খায় তাহলে
নিম্নোলিখিত উপকার গুলো সে পাবে।
বমিভাব এবং সকালের অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাবে
কলায় আছে ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিনের সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন বি৬ বমিভাব এবং সাকালের অসুস্থতা
সারিয়ে তুলতে পারে। যার কারনে গর্ভাবস্থায় প্রথম ত্রৈমাসিকে কলা খাওয়া মায়েদের জন্য সুপারিশ করা হয়।
কলা এডেমা কমাতে সাহায্য করে
অনেক মহিলা তাদের গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকের এডিমা বা জল পূর্ণ হওয়ার অভিজ্ঞতা
পান। এডিমার কারণে গোড়ালি ,পা এবং অন্যান্য জয়েন্টগুলিতে ফোলাভাব হতে পারে। আপনি যদি
জয়েন্টে বা গোড়ালিতে ফোলাভাব লক্ষ্য করেন, নোনতা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং আপনার ডায়েটে
কলা অন্তর্ভুক্ত করুন। এটি ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করবে।
কলা মায়েদের দ্রুত এনার্জি বুস্ট দেয়
এটা খাওয়ার ফলে শরীরে শর্করা ,গ্লুকোজ ,ফ্রক্টোজ এবং সুক্রোজ জাতীয় সাধারণ শর্করা থাকে যা শরীরে
তাৎক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য দ্রুত বিপাক হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় শেষ ত্রৈমাসিকে আপনার মক্তির স্তর
সঠিক থাকা খুবই গুরুত্বর্ণ। কলা খাওয়া আপনাকে দ্রুত শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
এই ফলটি যাতে আপনি সবসময় খেতে পারেন তার জন্য সবসময় হাতের কাছেই রাখুন। নিয়মিত কলা
খেলে আপনি ক্লান্তির হাত থেকে যেমন রক্ষা পাবেন অন্যদিকে আপনার শক্তির পরিমাণ বেড়ে যাবে।
কলা খেলে শিশুর মধ্যে জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা হ্রাস করে
যেহেতু কলায় রয়েছে ফোলেটের মত একটি ভিটামিন যা কিনা শিশুর মস্তিস্ক এবং মেরুদন্ডের বিকাশের
জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কলা গর্ভাবস্থায় খেল শরীরে ফোলেটের মাত্রা উন্নত হয় । ফলে ফোলেটের ঘাটতির
সম্ভাবনা হ্রাস পায়, যা শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দেয় বলে জানা যায়।
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে
রক্তাল্পতা এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকে, যা দেহের লাল রক্ত কোষের
স্তরকে কমিয়ে আনতে পারে। এই কোষগুলি সারা শরীর জুড়ে অক্সিজেন বহনের জন্য দায়ী। রক্তাল্পতার
অন্যতম প্রধান কারণ হল দেহে আয়রনের ঘাটতি। ফলস্বরূপ, আপনার ফ্যাকাশে ত্বক হতে পারে এবং
সর্বদা ক্লান্ত বোধ করতে পারে।
তদতিরিক্ত, এটি আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকারক হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় কলা খেলে
আয়রনের ঘাটতি প্রতিরোধ করা যায়। কলা আয়রনের একটি ভাল উৎস এবং তাই গর্ভাবস্থার ডায়েটে
অবশ্যই এটি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে
কলা জলে দ্রবণীয় ভিটামিন বি৬-এর সমৃদ্ধ উৎস, যা শিশুর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য
প্রয়োজনীয়। সুতরাং, গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে নিয়মিত কলা খাওয়া শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য
উপকারী।
মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়
কলাতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার থাকে যা অন্ত্রের গতিকে উত্তেজিত করতে এবং গ্যাসের ফলে
হওয়া পেটে ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে। একটি মাঝারি আকারের কলাতে প্রায় ৬ গ্রাম ফাইবার
থাকে। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা। কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়, অন্ত্রের গতি বাড়ায়।
রক্তচাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে এই কলা
কলা পটাসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। ২২৫ গ্রাম ওজনের এক কাপ চটকানো কলাতে ৮০০ মিলিগ্রামেরও বেশি
পটাসিয়াম থাকে। এটি একটি প্রয়োজনীয় খনিজ যা শরীরে রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং,
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত কলা খাওয়া রক্তচাপের স্তরে ওঠানামা রোধে সহায়তা করতে পারে।
অম্লতা এবং অম্বল প্রতিরোধে কলার ব্যবহার
কলা খাওয়া পেট এবং এসোফাগেয়াল প্রাচীরকে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় অ্যাসিডিটি এবং অম্বল একটি সাধারণ সমস্যা। এই সময়ে কলা খেলে অ্যাসিডিটি এবং অম্বল থেকে মুক্তি দেয়। এটি হজমে সহায়তা করতে পারে।
হাড়ের বিকাশে সহায়তা করে কলায়
কলা ক্যালসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা শিশু এবং মা উভয়েরই হাড়ের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়।
শরীরে পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যালসিয়ামও প্রয়োজনীয়। তাই গর্ভাবস্থায় কলা খেতে হবে।
কলা স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখতে সহায়তা করে
কলায় যেহেতু ভিটামিন সি-এর একটি ভাল উৎস, এই ভিটামিন, যাকে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডও বলা হয়,
এটি দেহে আয়রন শোষণের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি হাড়ের বৃদ্ধি, টিস্যুগুলি মেরামত এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক
বজায় রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে
সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া শিশু এবং মা-কে ভিটামিন সি-এর সমস্ত সুবিধা দিয়ে দিতে পারে।
কলা খাওয়ার কারণে ক্ষুধা জাগায়
যে সকল মায়েদের ক্ষুদা হ্রাস পায় তাদের কলা খাওয়া দরকার । করণ কলার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার
ভিটামিন যা শরীরে ক্ষুধা জাগায়। আর তাই গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন নিয়ম করে কলা খাওয়া দরকার।
কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
আমরা কলাকে কাঁচা ও রান্না করেও খেতে পারি । আর এটা একদিকে যেমন সব্জী হিসেবে কাজে লাগে
অন্যদিকে এটার মধ্যে থাকে প্রচুর পুষ্টিগুন। তবে কলার একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য হলো এটা একদিকে যেমন
ফল হিসেবে খাওয়া যায় অন্যদিকে এটা সব্জীহিসেবেও খাওয়া যায়। কাঁচা কলাও পুষ্টি হিসেবে কম নয়।
কাঁচা কলায় যে সকল পুষ্টি আছে তা উল্লেখ করা হলো।
১. কাঁচা কলা খাওয়র ফলে শরীরের ওজন হ্রাস পায়।
২. রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রন করে।
৩. হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়।
৪. কাচাঁ কলাখাওয়ার ফলে পেটের খারাপ ব্যকটেরিয়া।
৫. ডায়রিয়ায় কাঁচা কলা খেতে হবে। এছাড়াও এটা এনজাইম ও নানান ইনফেকশন দূর করে।
(আপনি যদি কৃষি বিষয়ক আপডেট ভিডিও দেখতে চান তাহলে ক্লিক করুন আমাদের এই চ্যানেলটিতে। আর দেখতে থাকুন সকল ভিডিও)
কলা খাওয়ার অপকারিতা
কলার তেমন একটা অপকারিতা নেই । তবে যদি কেহ খালি পেটে কলা খায় তখন একটু সমস্যা দেখা দিতে
পারে। তাই খালি পেটে কলার সাথে যদি কোন শুকনা খাবার মিশিয়ে খাওয়া যায় সেক্ষেত্রে অপকারের
বদলে উপকারই হতে পারে। অনেক সময় অত্যাধিক বেশি পরিমাণে কলা খেলে পায়খানা পাতলা ধরনের হতে পারে।
শেষকথা
আশাকরি সকলেই কলার পুষ্টিবিষয়ক সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। এছাড়াও যদি
আপনাদের এই বিষয়ে আরো কিছু জানার ইচ্ছে থাকে তবে অবশ্যই আমাদেরকে লিখবেন। আমরা
পরবর্তীতে আপনার লেখার উত্তর দিব। ধন্যবাদ কষ্ট্য করে লেখাটি পড়ার জন্য।
I really like looking through a post that can make people think. Also, thank you for allowing for me to comment!