আত্মীয় স্বজন নিয়ে উক্তি: আত্মীয় হচ্ছে এমন একটি সম্পর্ক যেটা আত্মার সাথে সম্পর্ক থাকে। আমাদের দৈনন্দিন
জীবনে আমাদের যে চারপাশের আত্মীয়-স্বজন আছে তারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। আর
তাই আত্মীয় সম্পর্ক হচ্ছে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক। যে সম্পর্কের মাঝে থাকে না কোন ভেদাভেদ, থাকে না কোনো স্বার্থ।
আর তাই বিপদ-আপদে সুবিধা-অসুবিধায় আত্মীয়রাই সবার আগে আমাদেরকে উপকার করার জন্য আসে। আজকে আমি
আত্মীয় নিয়ে বেশ কিছু মজার লেখা লিখব, যে লেখাগুলো পড়লে আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। সে লেখাগুলো আপনি
আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শেয়ার করে আপনার আত্মীয়তার সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারবেন। কারণ
স্পষ্ট হাদীসে আছে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহতালা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। তাই আসুন আমরা
আত্মীয় সম্পর্ককে আরও মজবুত ও আরো সুন্দর করার জন্য নিম্নোক্ত আত্মীয় স্বজন নিয়ে উক্তি সমূহ শেয়ার করি,
এবং আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক আরো সুন্দর করি।
আত্মীয় স্বজন নিয়ে উক্তি লেখায় আত্মীয় কি?
আত্নীয় হলো রক্তের সম্পর্ক বা বৈবাহিক সম্পর্কে গড়ে উঠা সম্পর্ক। আমাদের কিছু সম্পর্ক আছে যেগুলো রক্তের আবার
কিছু আছে যেগুলো বৈবাহিক। তাই দুই ভাবে আত্নীয় সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। আমরা সাধারণত আত্নীয় বলতে
তাদেরকেই বুঝি যাদের আমরা বলতে পারি স্বজন , কুটুম্ব,জ্ঞাতি, বান্ধব,বন্ধু । আর এই সকল লোক খুব কাছের হয়ে
থাকে । সাধারণত কোন ধরনের বিপদ আপদে এরা সবার আগে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে। আর তাই সহজ কথায়
যদি আমরা আত্বীয় এর মানে বলতে চাই তাহলে বলতে হবে যাদের সাথে আমাদের আত্নার সম্পর্ক আছে তাদেরকে আমরা
আত্নীয় বলতে পারি।
আত্মীয়তার প্রকারভেদ
অনেকেই অনেক ভাবে অত্নীয়র প্রকার ভেদ ব্যাখা করেছেন তবে তাদের মধ্যে থেকে যে বিভাজনটি সবথেকে বেশি স্বীকৃত
তা হলো আত্নীয় সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায় । আর সেই প্রকারভেদ গুলো নিম্নোক্ত উদাহরণ সহ বিস্তারিত ব্যাখা করা হলো:-
- ১ম শ্রেণির আত্নীয়।
- ২য় শ্রেণির আত্নীয়।
- ৩য় শ্রেণীর আত্নীয়।
১ম শ্রেণির আত্নীয়
এই শ্রেনীর আত্নীয় হলো সাধারণত পরিবারে যারা এক সাথে বসবাস করে তাদেরকেই বুঝানো হয়। যেমন- স্বা বা স্ত্রী ,পিতা ,পুত্র, কন্যা, মা।
২য় শ্রেণির আত্নীয়
এই শ্রণীর আত্নীয় সাধারণত প্রথম শ্রেণীর থেকে একটু দূরের হয় । যেমন উদাহরণ হিসেবে যদি বলা যায় তাহলে তারা হলো মায়ের ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, বোনের স্বামী কন্যার স্বামী ইত্যা। এরাই হলো দ্বিতীয় শ্রেণীর আত্নীয়।
৩য় শ্রেণীর আত্নীয়
সাধারণত তৃতীয় শ্রেণীর আত্বীয় আরেকটু দূরের যারা তাদেরকে বলা হয়। যেমন স্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে, বোনের স্বামীর ভাই ইত্যাদি।
আত্মীয়তার গুরুত্ব
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একদিকে যেমন রয়েছে সামাজিক গুরুত্ব, অন্যদিকে
ধর্মীয়ভাবেও রয়েছে এর অনেক গুরুত্ব। আমরা যদি প্রতিনিয়ত আমাদের আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করি তবে
আমাদের সমাজে যেমন শান্তি ফিরে আসবে, তেমনি সমাজ থেকেও দূর হবে সমস্ত অন্যায় অত্যাচার। আর তাই
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী কে মহান আল্লাহতালাও পছন্দ করেন না। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বিভিন্ন
সময় আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার জন্য তাগিদ দিয়ে গেছেন । আর তাই আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা আমাদের জন্য একান্ত
অপরিহার্য।
আত্মীয়তার বন্ধন
যেহেতু আত্মীয়তার সম্পর্ক হচ্ছে হৃদয়ের সম্পর্ক, অর্থাৎ সেই সম্পর্কটা আমাদের অন্তর থেকে । আর তাই আত্মীয়তার
বন্ধন টা হতে হবে আমাদের আত্মার বন্ধন। আত্মার বন্ধন মানে একজন কষ্ট পেলে আরেকজনের কষ্ট পাওয়া উচিত,
একজনের দুঃখে আরেকজন দুঃখ্য পাওয়া উচিত। একজনের সাথে আরেকজন সম্পর্ক হবে আত্বার। তবেই বলা যায় যে
তার সাথে আমাদের আত্মার বন্ধন হয়েছে । আর তাই আত্মীয়তার বন্ধনে থাকবে আত্মার বন্ধন।
বেইমান আত্মীয় নিয়ে উক্তি
আমাদের সমাজে যেমন ভাল আত্নীয় রয়েছে তেমনি খারাপ আত্নীয়ও রয়েছে। আর তাই সেই সকল লোভী স্বার্থপর
আত্নীয়দেরকে আামদের পরিত্যাগ বা এড়িয়ে চলা উচিৎ। কিভাবে এদেরকে চিনবেন সেই বিষয়ে নিচে কিছু উক্তি দেয়া হল
যেগুলো আপনাকে বেইমান আত্নীয় চিনতে সহযোগীতা করবে। একই সাথে আপনি উক্তি গুলো বিভিন্ন সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমেও শেয়ার করতে পারবেন।
স্বার্থ পর বেইমান যাও আমার থেকে দূরে
তোমাদের দেখতে চাইনা শুধু খেতে চাও পেট পুরে।
নিজের বেলায় ষোল আনা অন্যর বেলায় বাকি।
সুযোগ বুঝে আসো তুমি কাজের বেলায় ফাঁকি।
যে বুঝের নিজের স্বার্থ পরের করে ক্ষতি
তারাই হলো বেইমান স্বার্থ পর অতি।
আত্মীয় স্বজন নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ইসলাম আত্নীয়র সম্পর্ক রক্ষা করার ব্যাপারে অনেক তাগিদ রয়েছে। আর এই সম্পর্কে কোর আন ও হাদীসে রয়েছে
অনেক আয়াত। আর তাই যদি কেহ আত্নীয়র সম্পর্ক রক্ষা করে চলে তবে রয়েছে বহুবীদ ফযিলত ।আর তাই প্রতি নিয়ত
আমাদের আত্নীয় সম্পর্ক রক্ষা করে চলা উচিৎ।
- আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা হচ্ছে ঈমানের পরিচায়ক। আর তাই যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।
- আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা আল্লাহর আনুগত্য্ করার বহিঃপ্রকাশ । মহান আল্লাহ বলেন “ আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে ভয় করে তাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করে কঠোর হিসাবকে (রা’দ ১৩/২১)
- যদি কেহ আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে তবে বলা যায় সে যেন মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলো। আর তাই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন ” হেহেম ( রক্তের বাঁধন ) রহমানের অংশ বিশেষ । সে বলবে হে প্রভু ! আমি মাযলূম,আমি ছিন্নকৃত। হে প্রভূ ! আমার সাথে দর্ব্যবহার করা হয়। হে প্রভু !!তখন তার প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা জবাব দিবেন ,তুমি সন্তুষ্ট নও যে, যে ব্যাক্তি তোমাকে ছিন্ন করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব এবং যে তোমাকে যুক্ত করবে, আমি তার সাথে সম্পর্ক জুড়ে রাখব।
- আবু যর গিফারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমার বন্ধু নবী করীম (ছাঃ) আমাকে কতিপয় উত্তম গুণের ব্যাপারে উপদেশ দেন। তিনি আমাকে উপদেশ দেন যে, আমি যেন আমার চেয়ে উঁচু স্তরের লোকের দিকে লক্ষ্য না করি; বরং আমার চেয়ে নিম্নস্তরের লোকের দিকে তাকাই। তিনি আরো উপদেশ দেন, দরিদ্রদের ভালবাসতে ও তাদের নিকটবর্তী হ’তে। তিনি উপদেশ দেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে, যদিও তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে।
আত্মীয় স্বজনের হক
আত্মীয়-স্বজন যেহেতু আমাদের পরিবারের অংশ। আর তাই বিভিন্ন হাদিস এবং কোরআনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দ্বারা এটা
প্রমাণিত হয় যে, আত্নীয় স্বজনের প্রতি আমাদের হক রয়েছে অর্থাৎ এক আত্মীয়ার উপর অন্য আত্নীয়র হক রয়েছে। আর
সেই হকগুলো আমাদের আদায় করা উচিত। আর সেই হক গুলোর মধ্যে যেগুলো উল্লেখযোগ্য সেগুলো হলো নিম্নরুপ-
- আত্নীয়র সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা।
- প্রতিটি আত্নীয়র সাথে ভাল আচরণ করা।
- যদি কোন কারণে আত্নীয় স্বজন অভাব গ্রস্থ হয় তবে তার অভাব দূর করার চেষ্টা করা।
- সাধ্য মাত মেহমানদারি করা।
- কোন কারনে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে সেবা করা বা সুস্থ্য করার চেষ্টা করা।
- আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে সর্তক করা।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী হাদিস
এই সম্পরর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমানিত হয় । অনেক গুলো হাদিসে এই হাদিসটি বর্ণনা করা
হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো বুখারি ৫৯৮৪ মুসলিম ২৫৫৬ তিরমিযি ১৯০৯ আবু দাউদ ১৬৯৬ আহমদ ১৬২৯১ )
যার বাংলা অর্থ আবু মুহাম্মদ জুবাইর ইবনে মুত্বইম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ” আত্নীয়তার
সস্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’’
আত্মীয় স্বজনের জন্য দোয়া
যেহেতু আমাদের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী হচ্ছে আমাদের আত্মীয়-স্বজন। আর তাই আত্মীয়-স্বজন যদি ভাল থাকে, তবে
আমরাও ভালো থাকবো এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। কারণ একজন আরেকজনের বিপদে এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক।
আর তাই আমাদের প্রতিনিয়ত মহান আল্লাহতালার দরবারে তাদের জন্য দুয়া করা দরকার। যখন আমরা বিভিন্ন সময় দোয়া
করব তখন অবশ্যই আমাদের আত্মীয় স্বজনদের জন্যও দোয়া করা উচিত।
আত্মীয় স্বজন নিয়ে উক্তি শেষ কথা
আশা করি উপরোক্ত আত্মীয় স্বজন নিয়ে উক্তি লেখাটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। আমাদের প্রত্যেকেরই
উচিত আমাদের যারা আত্নীয় আছে তাদের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখে চলা। আর তাই সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে
আমাদের সমাজকে, আমরা সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারব। তাই আসুন আমাদের সমাজ এবং দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে
তুলি সমাজ এবং দেশে সব সময় শান্তি বিরাজ করুক এ প্রত্যাশা রেখে আপনাদের কাছ থেকে আজকের মত বিদায় নিতে
চাচ্ছি। আশাকরি লিখাটি ভালো লেগেছে, আর লিখাটি ভালো লেগে থাকে সবার সাথে শেয়ার করবেন। আর আমাদের এই
সাইটে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর লেখা আছে, আপনি ইচ্ছে করলে সেগুলোও পড়ে দেখতে পারেন । আশা করি অনেক
ভাল লাগবে।
আরো পড়তে পারেন
১. টাকা নিয়ে উক্তি ও কাকে বলে।
৫. স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে উক্তি
3 comments
Pingback: দুর্নীতি নিয়ে ছন্দ উক্তি ও রিপোর্ট
Pingback: পরীক্ষা শেষ নিয়ে ফানি স্ট্যাটাস
Pingback: আমি তোমার সাথে কথা বলবো না