গ্যাস্ট্রিক রোগীর খাবার তালিকা – কমবেশি সবারই এই ধরনের সমস্যার সন্মুখিন হতে হয়। দেখা যায় শকরা ৮০ ভাগ
লোক এই গ্যাসের সমস্যার সন্মুখিন হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতন হই তবে দেখা যাবে এই ধরনের সমস্যার
সন্মুখিন আমাদের হতে হবে না। খুব সহজেই আমরা এই ধরনের সমস্যার হাত হতে রক্ষা পেতে পারি। এই রকম সমস্যা
হলে খুবই অস্বস্তি ভোগ করতে হয়। মাঝে মাঝে খেতে হয় পাওয়ার ফুল গ্যাসের ওষূধ। আজ এই আলোচনার মাধ্যমে
আপনাদের এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যাতে করে আর কারো গ্যাসের
সমস্যা না হয়। তাই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন আর আপনার পছন্দ মত পদ্ধতিটি অবলম্বন করে আপনার সমস্যার
সমাধান করেনিন।
গ্যাস্ট্রিক রোগীর খাবার তালিকা
খুব সহজ একটি নিয়ম মেনে চল্লে বা কিছু খাবার প্রতিদিনের তালিকায় যোগ করলে এই ধরনের সমস্যা থেকে আমরা
সমাধান করতে পারি। বা এই ধরনের খাবার খেলে আমাদের কোন দিনও গ্যাসের সমস্যা আর হবেনা। পেটে গ্যাস হওয়ার
জন্য সবথেকে যে জীনিসটি দায়ী তা হলো আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য অভ্যাস । আমরা যদি আমাদের খাদ্য অভ্যাস
পরিবর্তন করতে পারি। আর প্রতিদিনের খাদ্যর সাথে কিছু খাবার যোগ করে খেতে পারি তবে কোন দিনও আমাদের এই
ধরনের সমস্যার সন্মুখিন হতে হবে না। আর যদি কোন কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে তবে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান
হয়ে যাবে। তবে চলনু খাবার তালিকায় কোন কোন খাবার খেলে আমাদের এই ধরনের সমস্যার সন্মুখিন হতে হবেনা।
পেঁপেঁ খাওয়ার মাধ্যমে গ্যাসের সমস্যার সমাধান
পেঁপেঁ খাওয়ার মাধ্যমে গ্যাসের সমস্যার সমাধান এটা মূলত ম্যাজিকের মত কাজ করে । যদি কোন কারণে আপনার
গ্যাস হয়ে থাকে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে আপনি কাঁচা বা পাকা পেঁপেঁ খেতে পারেন। কারণ এই ফলটি হজম শক্তির
জন্য খুবই কাজে দেয় । কারণ এতে রয়েছে পেপটিক এ্যসিড যা হজম শক্তির কাজকে আরো গতিশীল করে তুলে। পাঁকা
পেঁপেঁও খুবই উপকারী । যদি কেউ কষ্ট কাঠিন্য রোগে ভোগেন তবে দুধের সাথে মিশিয়ে রাত্রে বা সকালে খেলে খুবই
উপকার পাওয়া যায়। তাই যদি আপনার পেটে গ্যাস হয়ে থাকে তবে খাবার এর তালিকায় পাঁকা বা কাঁচা পেঁপেঁ রাখুন
দেখবেন আপনার আর এই ধরনের সমস্যা হবে না।
শসা খেলে গ্যাস্ট্রিক ভাল হয় / শসা খেলে কি হয়?
শসা খেলে গ্যাস্ট্রিক ভাল হয় যদি কারো এই জাতীয় সমস্যা হয়ে থাকে তবে আপনি খাবারের সাথে কাঁচা সালাদ হিসেবে
খেতে পারেন এই শসা। কারণ এটা হজম শক্তির জন্য খুবই কার্যকর। আর এর জন্য ভূমিকা পালন করে থাকে এর মূল
খাদ্য উপাদান ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি। আর তাই যারা প্রতিদিন খাবারের সাথে কাঁচা শসা সালাদ হিসেবে খায়
বিশেষ করে প্রচৃর উন্নতমানের খাবার ( মাংস ,পোলাও, বিরায়ানী) ইত্যাদি জাতীয় খাবার খেলে সালাদ হিসেবে অবশ্যই শসা
খাওয়া উচিৎ এতে করে হজম শক্তি ত্বরান্বিত হবে যার ফলে পেটে গ্যাসের চাপ হবে না।
দই খেলে কি হয়
দই খেলে কি হয় এটা জেনে আপনি অবাক হবেন। কারণ আমরা অনেকেই এই বিষয়টিকে ভুল ব্যাখা দিয়েে এসেছি
অনেকেই জানেন দই খেলে গ্যাস্ট্রিক হয় কিন্তু এটা ভুল । কারণ দই খেলে পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি তথা গ্যাসের সমস্যার
সমাধান হয়। আর তাই মানুষ যুগ যুগ ধরে বিয়ে বাড়িতে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাওয়ার পরে দই খাওয়ার প্রচন করে আসছে।
মূলত এটা খাওয়া হয় আঁশ জাতীয় বা প্রটিন জাতীয় খাবার যেন খুব সহজেই হজম হয় তার জন্য। কারণ দই এর মধ্যে
রয়েছে প্রচুর উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। পেটের গ্যাস হতে দেয়না।
কমলা খাওয়ার উপকারীতা ও গ্যাস্ট্রিক ভাল হয়
আমাদের দেশে পূর্বে যদিও এই ফলটি চাষ হতোনা কিন্তু বর্তমানে এই ফলটি খুবই ব্যাপক ভাবে চাষ হচ্ছে। তাছাড়া প্রায়
সারা বছরই এই ফলটি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা এর উপকারীতা সম্পর্কে না জানার কারণে অনেক সময়
এই ফলটি আমরা খাইনা বা খেতে চাই না। যদি আপনার গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা থাকে বা হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে
চান তবে এই ফলের জুড়ি মেলা বার । কারণ এই ফলটি পেটের সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে যা মানুষের গ্যাস্ট্রিক
সমস্যার সমাধান করে।
কলা খাওয়ার মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক দূর করা
অনেক সময় আমরা কাঁচা কলা রান্না করে সব্জী হিসেবে খেতে পারি। আবার পাঁকা কলা ফল সিবেও খাওয়া যায়। আর
আপনি যে ভাবেই কলা খাননা কেন এই ফলটি খেলে এ থেকে পাবেন স্যালুবল ফাইবার যা আপনার পেটের কোষ্ঠকাঠিন্য
দূর করার ক্ষমতা রাখে। আর এর সাথে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, যার ফলে পেটে গ্যাস জমতে দেয় না। আর খুব সহজেই
পায়খানা হয়ে যায়। আর তাই যদি কেহ নিয়ম করে দুটো কলা প্রতিদিন খায় তাহলে বলা যায় তার কাছে গ্যাসের সমস্যা
কোন দিনও আসবে না।
গ্যাস্ট্রিক ভাল করতে খেতে পারেন মৌরির পানি
প্রতিদিন রাত্রে মৌরি পানির সাথে ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলা যদি সেই পানি খাওয়া যায় তবে দেখা যায় এই সমস্যা থেকে
ভাল হওয়া যায়। আমি নিজেও এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করে আমার গ্যাস্ট্রিক ভাল করেছি। আপনিও ইচ্ছে করলে খেয়ে
দেখতে পারেন। কারণ এই জীনিসটি খুব একটা ব্যায়বহুল নয় । তাই খুব সহজেই আপনি খেয়ে দেখতে পারেন। তবে
অনুরোধ রইল যদি আপনার উপকার হয় তবে এই লেখাটি শেয়ার করার জন্য।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে আদার ম্যাজিক
যাদের প্রচুর গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে তারা মূলত এই খাবারটি খেয়ে পরিক্ষা করতে পারেন। আমি ১০০ ভাগ গ্যারান্টি
দিতে পারি যদি আপনার সমস্যাটি প্রাথমিক পর্যায়ে হয়ে থাকে তবে উপকার পাবেন। কারণ এই খাবারের মধ্যে রয়েছে
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা কারণে পেট ফাঁপা ও বদহজম খুব সহজেই দূর হয়ে যায়। আর তাই কাঁচা আদার সাথে
একটু লবন যোগ করে খেতে পারেন দেখবেন সাথে সাথে কাজ হচ্ছে।
পুদিনা পাতার ব্যবহার ও গ্যাস্ট্রিক নিরাময়
এটা মূলত ওষুধ হিসেবে খাওয়া হয় যদি দেখা যায় আপনার পেট ফাঁপা বা বমি বমি ভাব হচ্ছে তবে ৫ থেকে ৬ পুদিনার
পাতা নিয়ে হালকা গরম পানিতে সিদ্ধকরে সেই গরম পানি খান । দেখবেন আপনার এই ধরনের সমস্যার সমাধান হয়ে
গেছে। আমি নিজেও এই খাবার বেশ কয়েকবার খেয়েছি এতে ভাল ফল পাওয়া যায়। তাছাড়াও আমার জানা মতে অনেকেই
এই পুদিনার পাতার গরম পানি খেয়ে সমস্যার সমাধান পেয়েছে।
ঠান্ডা দুধ খেলে কি হয় দেখুন
পেট ঠান্ডা করার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা দুধই যথেষ্টে । কোন কারণে যদি আপনার পেটে গ্যাসের ভাব হয় আর সাথে সাথে
যদি এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ খেতে পারেন তবে দেখবেন এই ধরনের প্রভলেম থেকে আপনি মুক্তি পেয়েগেছেন। কারণ এইরকম
দুধ আপনার খাবার হজম করবে তারাতাড়ী যার ফলে গ্যাস হবে না।
আমড়া খাওয়ার উপকারীতা ও গ্যাস্ট্রিক দূর করা
আমড়া খাওয়ার উপকারীতার বিষয়টি সবাই যদি জানত তবে সবাই আজ হতেই আমড়া খাওয়া শুরু করে দিত। তবে যাই
হোক আরো অনেক উপকার অমড়ার মধ্যে রয়েছে কারণ একটি আমড়ায় প্রচুর ভিটামিন সি এর উৎস যা আমাদের
শরীরের জন্য খুবই উপকারী । এছাড়াও যদি কারো গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা হয়ে থাকে তবে আপনি আমড়া খেতে পারেন ।
তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এই ধরনে রোগ নিরাময় হবে।
জিরা খাওয়ার উপকারিতা ও গ্যাস্ট্রিক দূরকরণ
মসলা জাতীয় যতগুলো উপদান রয়েছে তার মধ্যে জিরা অন্যতম একটি উপাদান। যদি কারো পেটের সমস্যা হয় বিশেষ
করে পেট ফাঁপা বদহজম এই জাতীয় তবে আপনি অল্প কয়েকি জিরা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারেন দেখবেন এতে করে
আপনার পেটের সমস্যাটি ভাল হয়ে গেছে। এছাড়াও যদি কারো জ্বর হয়ে থাকে তবে ৫০ গ্রাম জিরা ও ১০০ গ্রাম আখের
গুড় বড়ি বানিয়ে দিনে তিন বার খেতে পারেন দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি জ্বর ভাল হয়ে যাবে।
গ্যাস্ট্রিক রোগীর খাবার তালিকা এর গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান
উপরোক্ত খাবার এর পরেও বেশ কিছু নিয়ম কানুণ আপনি পালন করে চলেন তবে এই সমস্যাটি আপনার জীবনে
কখনই দেখা দিবেনা। আমরা সবাই জানি রোগ নিরাময় থেকে রোগ প্রতিরোধ অনেক ভাল আর তাই যদি আপনি নিচের এই
নিয়ম গুলো অনুসরণ করে তবে দেখবেন আপনার কোন দিনও এই ধরনের সমস্যা হবেনা।
- কখনও পেট পুরে বা পেট খালি করে খাবার খাওয়া যাবেনা।
- প্রচুর পানি পান করুন।
- শরীরিক ব্যায়াম করুন।
- নিয়ম করে হাটুন।
- তৈলাক্ত জাতীয় খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
- বাহিরের খাবার পরিহার করার চেষ্টা করুন।
- পচাঁ বাসি খাবার খাওয়া যাবেনা।
গ্যাস্ট্রিক রোগীর খাবার তালিকা এর শেষ কথা
আশাকরি গ্যাস্ট্রিক রোগীর খাবার তালিকা এই লেখাটি আপনাদের অনেক কাজে লাগবে। পূর্বে আমি নিজেও এই
ধরনের সমস্যার সন্মুখিন হয়েছি। বর্তমানে আপনাদের দোয়ায় উপরোক্ত বিষয়গুলো খাবার তালিকায় যোগ করে নিজের
সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি। আপনিও যদি আমার মত করেন তবে দেখবেন প্রভলেম সমাধান হয়ে গেছে। সবাইকে
ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ভাল থাকবেন । আর যদি এই লেখাটি আপনার সমস্যার সমাধান করে
থাকে তবে সবার সাথে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি যাতে করে সবাই এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারে।
আরো পড়ুন:
২. পহেলা বৈশাখের বিভিন্ন উৎসব।
One comment
Pingback: শেখ মুজিবুর রহমান জীবনী বাংলা