চিন্তা দূর করার ১০টি সহজ উপায়: দুশ্চিন্তা বিহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । পৃথিবীর প্রায় সব মানুষেরই কম বা বেশি এই দুশ্চিন্তা আছে, বা ছিল। তাই আপনি আমিও এর বাহিরে নই। আমরা যারা এই দুশ্চিন্তায় ভুগছি আস্তে আস্তে মানসিক রোগীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছি। আর এই বাজে অভ্যাস থেকে আমাদের মুক্তি হওয়া অনেক বেশি জরুরী ।
আমরা যদি দিনের পর দিন এই চিন্তা রোগে ভুগতে থাকি তাহলে আমাদের একদিকে যেমন ব্রেইনের কোষগুলো নষ্ট হবে অন্যদিকে এর সাথে সাথে ক্ষতি হতে থাকে আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য।আর তাই বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে , যারা অনেকদিন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে তারা আস্তে আস্তে মানসিক রোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শারীরিক রোগে ভূগে থাকেন।
আর তাই আজকে আমি আমার এই লেখাটার মাধ্যমে এমন কিছু জিনিস বা উপায় নিয়ে আলোচনা করবো যে গুলো আপনি পড়লে আপনি এই দুশ্চিন্তা নামক রোগ থেকে চিরতরে মুক্ত হতে পারবেন। সবসময় নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন, এবং আপনার জীবন যাপন হবে সুন্দর।
সেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, এর জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি অবশ্যই লেখাটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আমি আপনাকে ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলে দিতে পারি এই লেখাটি আপনাদের জন্য হতে পারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা।
চিন্তা কি?
এটা হচ্ছে এমন একটি জিনিস, যেটা মানুষ তার কল্পনায় জাগ্রত করে থাকে। একজন মানুষ যখন কোন জিনিসকে নিয়ে, অথবা কোন কাজকে নিয়ে তার মনে মনে ভাবতে থাকে সেই ভাবনাটাকে মূলত আমরা চিন্তা হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। এক্ষেত্রে আমরা চিন্তাটাকে দুটো ভাগে ভাগ করতে পারি । একটি মানুষের ভালো দিক নিয়ে চিন্তাভাবনা।
আরেকটি হচ্ছে মানুষের খারাপ দিকটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা। আর এই চিন্তা নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানি বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু-্ একটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো। যাতে করে আপনি সহজেই চিন্তা কি ? সে বিষয়টা পরিস্কারভাবে বুঝতে পারেন।
- ফ্রয়েড তার মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বের বিবর্তনে চিন্তাকে মানব ইচ্ছাবৃত্তির একটি সংবেদী শক্তি বিবেচনা করেন। যা কিনা ইন্দ্রিয়লব্ধ সচেতন মন অপেক্ষা অনেক নিচে চালিত হয়।
- জঁ পিয়াজেঁর তার জ্ঞানীয় উন্নয়ন তত্ত্ব অনুসারে, চিন্তা পরিবেশের উপর কর্মের উপর ভিত্তি করে করা হয়। অর্থাৎ পিয়াজেঁর ধারণা যে কর্মপদ্ধতির লক্ষ্যবস্তু আত্তীকরণের মাধ্যমে পরিবেশকে উপলব্ধি করা যায় এবং কর্মপদ্ধতির কমা বস্তু মিটমাট করে।
খারাপ চিন্তার প্রভাব
যেহেতু চিন্তা একটি রোগ। তাই আমাদের সবসময় এই রোগটি থেকে দূরে থাকাই উত্তম। আর এটা যদি হয় খারাপ চিন্তা তাহলেতো কোন কথাই নাই। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, দীর্ঘদিন মানসিক উদ্বেগে ভুগলে গ্যাস-অম্বল এমনকী টিউমারও হতে পারে । আপনি যদি সবসময় খারাপ চিন্তায় মত্ত থাকেন তার জন্য আরো যে সকল সমস্যা হতে পারে তার মোধ্য উল্লেখ যোগ্য সমূহ নিচে দেয়া হলো।
- সমাজের চোখে আপনি একজন খারাপ মানুষ হিসেবে পরিচিত হবেন।
- সবাই আপনাকে ঘৃনা করবে।
- আপনার আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে কোন প্রকার সাহায্য পাবেন না।
- ধর্মীয় ভাবেও এটা খুবই খারাপ কাজ।
- যে সবসময় খারাপ চিন্তা করে সে আসলে মানুষিক রোগে ভূগে থাকেন।
- আস্তে আস্তে সে শারীরিক সমস্যায় ভূগতে থাকেন।
মনের চিন্তা দূর করার টিপস/চিন্তা দূর করার সহজ উপায়/বাজে চিন্তা দূর করার উপায়
সকল চিন্তাই দূর করতে হবে এরকম না। আমাদের মাথায় কিছু চিন্তা আছে যেগুলো আমাদের করা দরকার। কিন্তু যে চিন্তাগুলো আমাদের জন্য কষ্ট দেয়, যে চিন্তাগুলো মানুষের ক্ষতির কারণ হয়, সেই চিন্তা গুলো আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে। আমরা অনেক সময় চেষ্টা করেও এরকম বাজে চিন্তা গুলো পরিত্যাগ করতে পারিনা।
আর এটা বিভিন্ন কারণেই হয়ে থাকে। আর তাই যারা এভাবে বারবার নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করেও বাজে চিন্তা গুলোকে চিরতরে দূর করতে পারছেন না। তাদের জন্যই মূলত আমার এই লেখা। যেখানে দেখিয়েছি সুন্দর সুন্দর টিপস। যে গুলো আপনি কাজে লাগিয়ে আপনার খারাপ চিন্তা গুলোকে দূর করতে পারবেন।
সবসময় সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখা
আপনার মনে যখনই খারাপ চিন্তা আসবে, তখনই মনে রাখবেন আপনার জন্য সৃষ্টিকর্তাও সব সময় চিন্তা করেন। যেহেতু তিনি হচ্ছেন সকল কিছুর মালিক, অবশ্যই আপনাকে নিয়ে তার একটি পরিকল্পনা আছে। তাই আপনার পরিকল্পনা তার কাছে কিছুই না। এটা ভেবে নিজেকে সব সময় চিন্তা মুক্ত রাখতে পারবেন।
চিন্তার কারণ খুজে বের করুন
আপনির মনে যখন কোন বাজে চিন্তা আসে, তখন আপনি গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে দেখুন কোন জাতীয় চিন্তাগুলো আপনাকে বেশি প্রভাবিত করে। সেই চিন্তার কারণ কি? আপনি যদি সেই চিন্তার মূল কারণটি উদঘাটন করতে পারেন তবে, আপনি সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা দূর করতে পারবেন।
যদি কোন নির্দিষ্ট কারণ পেয়ে থাকুন তবে সেটার বিকল্প উপায় ভেবে রাখুন
আপনার মনে যে কারণে চিন্তার উৎপত্তি হয়, সেই কারণটি নিশ্চিত হওয়ার পর, সেই বিষয়ের বিপরীতে আপনার যে সকল সুবিধা বা যেসকল বিষয় রয়েছে যেগুলো দিয়ে আপনি সেই দুশ্চিন্তার কারণ কে, সহজেই নির্মূল করতে পারবেন সেটা সম্পর্কে ভাবুন । নিজের মনকে এটা বিশ্বাস করান যে আপনার চিন্তার বিষয়টি মূলত কোন বিষয়ই না । এটা আপনার কাছে খুবই একটি সাধারণ বিষয়।
সবসময় হাসি খুসি থাকুন
বাজে চিন্তা দূর করার জন্য হাসিমুখে থাকার কোনো বিকল্প নেই। হাসিখুশি মন সুখী সেই জন। এ কথার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় , যারা সবসময় হাসিখুশি থাকে তাদের মনে কখনো বাজে চিন্তা বাসা বাঁধতে পারেনা। তাই আপনি চেষ্টা করবেন সবসময় হাসিখুশি থাকতে। তাহলে বাজে চিন্তা ভাবনা আপনার মনে থাকবেনা।
বাচ্চাদের সাথে সময় দিন
বাচ্চারা হচ্ছে নিষ্পাপ। এদের মনে কোন ধরনের চালাকি নেই। এরা কোন ধরনের হিংসা বুজেনা আর তাই এদের হাসি নির্মল। আর আপনি যদি এদের সাথে মিশেন আপনিও সে বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ নির্মল হাসির অধিকারী হবেন। আর আপনার মন থেকে চিরতরে চলে যাবে বাজে চিন্তা।
বাহিরে বেড়াতে যান
সময় পেলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বাইরে বেড়াতে যাবেন। এতে করে আপনার মনে জমে থাকা কাজের চাপ, মানসিক চাপ সব চলে যাবে। এভাবে আস্তে আস্তে আপনি চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন।
পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটান
এক গবেষণায় দেখা গেছে যায় পরিবার-পরিজন নিয়ে যারা সময় কাটায় তাদের তুলনায় যারা একাকি সময় কাটায় তাদের মধ্যে মানসিক রোগে ভোগার সংখ্যা বেশি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে বাজে চিন্তা দূর করার জন্য আমাদের পরিবারের সাথে থাকা খুবই প্রয়োজন।
সবসময় নিজেকে কর্ম ব্যস্ত রাখুন
কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা । আর কেউ যদি কাজ বাদ দিয়ে অলস ভাবে বসে থাকে। তবে সে সবসময় বাজে চিন্তা শুরু করে দেন। আর এইজন্য বাজে চিন্তা যদি আমরা দূর করতে চাই তবে সব সময় নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে হয়।
প্রতিদিন নিয়মিত ব্যয়াম করুন
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করে তাদের শরীর থেকে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। যেটা মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সহযোগিতা করে । আর তাই আপনি যদি মানসিক চাপ কমাতে চান? তবে প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম শুরু করে দিন।
ধর্মীয় কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন
প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ ধর্ম হচ্ছে তার বিশ্বাসের জায়গা। আপনি যদি নিয়মিত ধর্মকর্ম পালন করেন, তাহলে আপনার সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনার একটি বড় বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হবে। আর সেই বিশ্বাসটার মাধ্যমে আপনি আপনার মনের বাজে চিন্তা দূর করতে পারে।
ইসলামে চিন্তা দূর করার উপায় / মানসিক চিন্তা দূর করার দোয়া
ইসলামী নিয়ম পালন করেও আপনার দুশ্চিন্তা দূর করতে পারেন। আর এর জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দোয়া দরুদ। আপনি ইচ্ছে করলে সেই সকল দোয়া দরুদ এর মাধ্যমে আপনার মনের, সেই খারাপ চিন্তাগুলোকে দূর করতে পারেন। আর এর জন্য নিচের বিভিন্ন দোয়া-দরুদ এর মাধ্যম হতে পারে আপনার দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়।
যদি কারো মনে খারাপ চিন্তা বা হতাশা থাকে তাহলে সে যদি আল্লাহর জিকির ও দোয়া করতে পারবেন। কারণ দোয়া ও জিকির দ্বারা মনে শান্তি আসে। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা-বলেন-
যারা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদের অন্তর সমূহ আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তরে স্থিরতা ও প্রশান্তি আসে। (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)
চিন্তা দূর করার ঔষধ
সাংসারিক কারণেই হোক বা চাকরি হারানোর কারণে হোক অথবা ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার কারনেই হোক আমরা নানা কারণে দুঃশ্চিন্তা করে থাকিG এই দুশ্চিন্তা আপনার মধ্যে দীর্ঘদিন থাকলে আপনি বিভিন্ন রোগের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। আর আপনি যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে না পারেন,
সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে নিচের হোমিও ওষুধসমূহ থেকে যেকোনো একটি আপনি গ্রহণ করতে পারেন। তাহলে আপনি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
- Staphysagria
- Nat Mur
- Ignatia
- Acid Phos
- Gelsemium
- Arg
- Nit
চিন্তা দূর করার ব্যায়াম
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে, তারা শারীরিক ভাবে যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি মনের দিক দিয়েও তারা অনেক সুস্থ থাকে। তাদের দুর্দশাগ্রস্ত বা দুশ্চিন্তায় ভোগেনা। কারণ আমাদের শরীর এবং মনের সাথে একটি যোগসূত্র আছে । আর বিভিন্ন গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে।
এইজন্য আপনারা যদি চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে চান তবে অবশ্যই প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করতে হবে। আর প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করলে আপনার দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন। এক্ষেত্রে ইয়োগা খুবই কাজে দেয়।
নিতিবাচক চিন্তা দূর করার উপায় / মনের কুচিন্তা দূর করার উপায়
আমাদের অনেকেরই নিতিবাচক চিন্তা রোগ আছে। যারা সব সময় নেগেটিভ চিন্তা করে তার সকল কাজে বা কথাবার্তায় নিতিবাচক মনোভাব পোষণ করে থাকে। আর এটা তাদের নিতিবাচক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। আর যারা এই নেতিবাচক চিন্তা করে তারা সাংসারিক জীবন তথা সামাজিক জীবনে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি পায় না।
কারণ এটা তাদের একটি দোষ। তারা সবসময়ই মনে মনে নেগেটিভ চিন্তা করে থাকে। আর যাদের এই ধরনের সমস্যা আছে তাদের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য করলে আপনি এই সমস্যা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে পারবেন।
- মন থেকে সন্দেহ রোগ দূর করুন।
- যেকোনো কাজে পজিটিভ চিন্তা করুন।
- সবার সাথে মন খুলে কথা বলুন।
- সব সময় হাসিখুশি থাকুন।
- কোন বিষয়ে নিজের মধ্যে সন্দেহের জাগ্রত হলে, সে বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন।
দুশ্চিন্তা দূর করার খাবার
আমরা বেশ কিছু খাবার খেয়েও আমাদের মনের মধ্যে জমে থাকা দুশ্চিন্তা গুলো দূর করতে পারি। আর যে খাবারগুলো খেলে দুশ্চিন্তা দূর হয় সেগুলো বিভিন্নভাবে গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত। তাই আসুন যে সকল খাবার খেলে আমাদের দুশ্চিন্তা দূর হবে সেই সকল খাবার সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা করি।
দুশ্চিন্তা দূর করতে তৈলাক্ত জাতীয় মাছ:
মানসিক দুশ্চিন্তা কমাতে তৈলাক্ত মাছ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গবেষণায় পাওয়া গেছে,তৈলাক্ত মাছ স্ট্রেস হরমোন অ্যাড্রিনালিন ও করটিসোলের প্রতিক্রিয়া নিবৃত্ত করতে পারে। কানাডার টরন্টোর রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান শাহজাদী দেবজি বলেন, ‘তৈলাক্ত মাছে বিদ্যমান ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রদাহনাশক শক্তি স্ট্রেস হরমোনের ইফেক্ট কমাতে পারে। এটি উদ্বেগ কমায় ও মানসিক চাপ ভালোভাবে মোকাবেলা করায়।
দুশ্চিন্তা দূর করতে ঢেঁড়স
এটাতে বি ভিটামিন ফোলেট রয়েছে। এই বি ভিটামিনটি সুখের হরমোন ডোপামিন উৎপাদন করে। ডা. দেবজি বলেন, ‘মস্তিষ্কের ওপর ডোপামিনের প্রভাবে সুখের অনুভূতি উদ্দীপিত হয়।’ ২০১৭ সালে জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিক রিসার্চে প্রকাশিত গবেষণা সাজেস্ট করছে, মন খারাপ থাকার মাত্রা কমাতে পর্যাপ্ত ফোলেট গ্রহণ করা যেতে পারে।
দুশ্চিন্তা দূর করতে ওটমিল
২০১৬ সালে জার্নাল অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সেসে প্রকাশিত রিভিউ গবেষণা অনুসারে, এক বাটি উষ্ণ ওটমিল শিথিলতা ও প্রশান্তির মাত্রা যোগ করতে পারে। ডা. দেবজি তার গবেষনায় জানান জটিল কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার ফলে সেরোটোনিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
এই কেমিক্যালটি স্ট্রেস হরমোন হ্রাস করে।’ ওটস হচ্ছে ট্রিপ্টোফ্যানের ভালো উৎস, যা শরীরে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়।
দুশ্চিন্তা দূর করতে ডার্ক চকলেট:
অনেক মানুষই একমত হবেন যে মানসিক চাপ কমাতে তাদের প্রিয় খাবার হচ্ছে চকলেট, বিশেষ করে ডার্ক চকলেট। মুখে হাসি ফোটাতে প্রতিদিন একটি ডার্ক চকলেটই যথেষ্ট হতে পারে। কয়েকটি গবেষণায় দেখাগেছে, ডার্ক চকলেট খেলে সুখের অনুভূতি বৃদ্ধি পায়।
ডা. দেবজি বলেন, ‘ডার্ক চকলেটের উপাদান কোকোয়ার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রক্তনালীগুলোকে শিথিল করে, রক্তচাপ কমায় ও রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।’ ২০১৭ সালের একটি গবেষণামতে, প্রতিদিন ২০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেলে হার্ট ও রক্তনালির স্বাস্থ্যের ওপর উপকারী প্রভাব পড়তে পারে।
দুশ্চিন্তা দূর করতে আলু
এই কমফোর্ট ফুড খেতে কে না ভালোবাসে? গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপের সময় আলুর মতো স্টার্চ জাতীয় খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়। নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত হান্টার কলেজের নিউট্রিশন প্রফেসর মারটিকা হিনার বলেন, ‘আমাদের ক্যালরির প্রয়োজন যদি নাও হয় তবু মানসিক যখন হয় তখন উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হয়, সাধারণত যে সকল খাবারে তৈলাক্ত বা শ্বেতসার বা মিষ্টি পদার্থ থাকে।
এটাকে মানসিক ক্ষুধা বলা যেতে পারে, যেখানে আমরা তৃপ্তির জন্য খেয়ে থাকি। প্রচুর ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও অন্যান্য পুষ্টি রয়েছে এমন আলু খেতে পারেন। ডা. হিনারের বলেন, আমাদের মানসিক চাপ কমাতে মিষ্টি আলু ভালো একটি অপশন হতে পারে।
দুশ্চিন্তা দূর করতে পালংশাক
যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি আমাদের মাংসপেশীগুলো টাইট হয়ে পড়ে, আমরা স্পষ্টভাবে ভাবতে পারি না, ঘুমাতে সমস্যা হয় ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। যে পুষ্টিটি এসব উপসর্গকে প্রশমিত করতে পারে সেটা ম্যাগনেসিয়াম, যদি কেহ মানসিক চাপে থাকে তাহলে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে যায়।
ডায়েট ডায়াগনোসিস: নেভিগেটিং দ্য মেইজ অব হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন প্লানস’ বইয়ের লেখক ডেভিড নিকো বলেন, ‘পালংশাকের মতো সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।’
দুশ্চিন্তা দূর করতে গ্রিন টি
মানসিক চাপ কমাতে পারে এমন একটি পানীয় হচ্ছে গ্রিন টি। ডা. নিকো বলেন, ‘গ্রিন টি এর প্রধান সক্রিয় পুষ্টি হচ্ছে অ্যামাইনো অ্যাসিড এল-থিয়েনিন।’ বায়োকেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল বুলেটিনে প্রকাশিত গবেষণায় পাওয়া গেছে, লো ক্যাফেইন গ্রিন টি এর এল-থিয়েনিন মস্তিষ্কের ওপর ঘুমাচ্ছন্ন প্রভাব না ফেলেই মনকে শিথিল করতে পারে।
দুশ্চিন্তা দূর করতে কমলা
কমলা, মোসাম্বি ও অন্যান্য সাইট্রাস ফলে মায়ো-ইনোসিটল (প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন বি ভিটামিনের একটি ফর্ম) পাওয়া যায়। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য এই পুষ্টির দরকার রয়েছে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে ও মেজাজ শান্ত করতে মায়ো-ইনোসিটল সাপোর্ট দেয়।
দুশ্চিন্তা দূর করতে গাজর
নিউট্রিশান নুপটিয়ালসের প্রতিষ্ঠাতা মান্ডি এনরাইট বলেন, ‘মানসিক চাপ কমানোর অন্যতম সেরা খাবার হচ্ছে মচমচে সবজি ও ফল, যেমন- গাজর ও আপেল। খাবারের কড়কড়/মচমচ শব্দ মানসিক চাপ কমায় এবং কামড় দিয়ে এসব খাবার খেলে চোয়ালের অনমনীয়তা দূর হয়। চিবিয়ে বা কামড়িয়ে খেতে হয় এমন খাবার ফোকাসকে পুনর্নির্দেশিত করতে পারে এবং মানসিক চাপ কমাতে পারে।’
মনের আতঙ্ক দূর করার উপায়
অনেক সময় আমাদের মনে দুশ্চিন্তা থেকে সৃষ্টি হয় আতঙ্কের। আমরা এ ধরণের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকি। এটা মূলত দুশ্চিন্তার চূড়ান্ত রূপ। আর এই পর্যায়ে যারা আছেন তাদের জন্য নিচে কয়েকটি পরামর্শ প্রদান করা হল। যে পরামর্শগুলো আপনার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় পরামর্শ । এগুলো আপনার মনের আতঙ্ক দূর করতে পারবে।
- মন থেকে খারাপ চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।
- দূষিত বায়ু বাদ দিয়ে নির্ভেজাল বায়ু গ্রহণের চেষ্টা করুন।
- যে বিষয়গুলো আপনার মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, সেই বিষয়গুলো বিপরীতে নিজের যুক্তি দাঁড় করান।
- প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখান।
ভালো চিন্তা করার উপায়
আমরা অনেকেই ভালো চিন্তা করতে চাই। নিজে ভালো থাকতে চাই। আর ভালো থাকতে চায়না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। তাই আমরা সবাই চাই নিজেরা কিভাবে ভালো থাকতে পারি। আর ভালো থাকতে গেলে আপনাকে ভালো চিন্তা করতে হবে । তার এজন্য আপনি নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন। সেটা আপনাকে ভালো চিন্তা করতে সহযোগিতা করবে।
- সব সময় অন্যের উপকার করার চেষ্টা করা।
- ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকা।
- ভালো ভালো জ্ঞানের বই পড়া।
- ভালো মানুষের সাথে চলাফেরা করা।
- ছোট বা বড় সকলকে সন্মান করা।
মন স্থির করার উপায়
যদিও আমাদের মন থেকে আমরা সাময়িকের জন্য বাজে চিন্তা দূর করতে পারি। কিন্তু পরক্ষনেই আমরা আমাদের মনকে স্থির করতে পারি না। আর তাই আপনি যদি আপনার মনকে স্থায়ীভাবে স্থির করতে চান? সে ক্ষেত্রে শারীরিক ব্যায়াম, ধর্মচর্চা ও ধ্যানের কোনও বিকল্প নেই। এই তিনটির মাধ্যমে আপনি পারেন আপনার মনকে স্থায়ীভাবে স্থির করতে। অনেক তপস্বী গণ এই তিনটির মাধ্যমে তাদের মনকে স্থির করে নিয়েছেন। এটা বিভিন্ন গবেষণায় দ্বারা পরীক্ষিত।
শেষকথা
আমি আশাকরি আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত আপনি আপনার মনের খারাপ চিন্তা গুলো দূর করতে পারবেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই লেখাটি কষ্ট্য করে পড়ার জন্য।
(আপনি যদি চান তাহলে আমাদের কৃষি বিষয়ক একটি চ্যানেল আছে সেটা দেখতে পারেন কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও দেখতে)
No Responses