দুধ খাওয়ার দুয়া: দুধ হচ্ছে এমন একটি খাদ্য যেই খাদ্যটি জীবন্ত প্রাণী থেকে পাওয়া যায়। দুধ পুষ্টিগুণে ভরপুর, কেউ যদি দুধের পুষ্টিগুণ জেনে, সঠিক নিয়মে, সঠিক মাত্রায়, সঠিকভাবে দুধ পান করে তাহলে দুধকে বলা যায় অমৃত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীতে যত প্রকার খাদ্য পাওয়া যায় এক মাত্র দুধ হচ্ছে পরিপূর্ণ খাবার যেটা খেলে অন্য খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
তাই দেখা গেছে নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রাণীরই ছোট শিশু শুধু দুধ খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে। আসুন আজকে আমরা দুধের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। যেখানে থাকবে আপনারা দুধ কিভাবে খাবেন। কখন দুধ খাবেন, দুধ খাওয়ার নিয়ম এই বিষয়ে বিস্তারিত। দুধের উপকারিতা যেন আমাদের কাজে লাগে সেই বিষয়টি লক্ষ্য রাখবো দুধ খাওয়া বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আছে ।
যেগুলো আমরা না জানার কারণে, দুধ খাওয়ার পরেও দুধের থেকে কাঙ্ক্ষিত পুষ্টিগুণ পাইনা। আর তাই আসুন এই লেখা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকি দুধ খাওয়ার বিস্তারিত বিষয় জেনে নিই। যাতে করে আপনি দুধ খাওয়া সম্পর্কে ভালোভাবে ধারনা পেতে পারেন। এই নিয়ম গুলো সবাই আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োগ করতে হবে তবেই দুধ খাওয়ার দুয়া লেখা স্বার্থক হবে।
দুধের পুষ্টি গুন সমূহ
দুধ হচ্ছে পুষ্টিতে ভরপুর । প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান দুধের মধ্যে বিদ্যমান। প্রায় সবগুলো পুষ্টি উপাদানই দুধের মধ্যে বিদ্যমান। আর তাই রোগীর পথ্য বা খাবারের তালিকায় দুধকে সব সময় পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় । তাই আসুন প্রতি ১০০ গ্রাম দুধে যে পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে তা একটি তালিকার মাধ্যমে প্রকাশ করি যা দেখলেই সহজেই একজন বুঝতে পারবে দুধের পুষ্টি গুন সম্পর্কে ।
১০০ গ্রাম দুধে যে পরিমাণ ভিটামিন পাওয়া যায় :
- পানি আছে – ৮৮.১৩ গ্রাম।
- শক্তি বিদ্যমান- ৬০ কিলোক্যালরি।
- প্রোটিন পাওয়া যায়- ৩.২৮ গ্রাম।
- কার্বোহাইড্রেট আছে- ৪.৬৭ গ্রাম।
- মোট ফ্যাট আছে -৩.২ গ্রাম।
- চিনি পাওয়া যায়-৪.৮১ গ্রাম।
- ক্যালসিয়াম -১২৩ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম-১২ মিলিগ্রাম।
- ফসফরাস-১০১ মিগ্র।
- পটাসিয়াম আছে- ১৫০ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম থাকে-৩৮ মিলি গ্রাম।
- জিঙ্ক বিদ্যমান- ০.৪১ মিলিগ্রাম।
- কপারের পরিমাণ-০.০০১ মি.গ্রা
- সেলেনিয়াম-১.৯ ইউজি।
- থায়ামিন-০.০৫৬ মিগ্রা।
- রিবোফ্লাভিন-০.১৩৮ মিলিগ্রাম।
- নিয়াসিন -০.১০৫ মিলিগ্রাম।
- প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড -০.০৪৩ গ্রাম।
- ভিটামিন- বি -০.৬১ গ্রাম
- কোলিন-১৭.৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন B12- 0.54µg
- ভিটামিন এ- ৩২µg
- রেসিওনল-৩১ µg
- ক্যারোটিন বিটা-৭µg
- ভিটামিন ই- ০.০৫মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ডি-১.১ µg
- ভিটামিন কে -০.৩µg
- ফ্যাটি অ্যাসিড মোট স্যাচুরেটেড – ১.৮৬ গ্রাম
- ফ্যাটি অ্যাসিড , মোট পলিআনস্যাচুরেটেড – ০.১০৮ গ্রাম।
- কোলেস্টেরল-১২ মিলিগ্রাম।
কেন দুধ পান করা উচিত?
যেহেতু দুধের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ডি এর মাত্রা সবচেয়ে বেশি। তাই মোটামুটি ধরা যায় ২০০ মিলিমিটার দুধে রয়েছে প্রায় ২৫৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। আর প্রতিদিন আমাদের শরীরে ১০০০ থেকে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন রয়েছে। যা ১ থেকে ২ গ্লাস দুধ খালেই যথেষ্টে।
তাই স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতিদিন আমাদের খাবার তালিকায় দুধ রাখ প্রয়োজন। এছাড়াও দুধ শরীরের আরো যে সকল উপকার করে তাহলো।
- দুধ শরীরের হার মজবুত করে।
- এটা খাবার হজমে সহায়তা করে।
- শরীরের ক্ষয়রোধ করে।
- ত্বক ও চুলের উপকার করে।
- মস্তিস্কের কর্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা সহ আরো অনেক উপকার দুধ করে থাকে যেহেতু দুধের মধ্যে প্রায় সবগুলো পুষ্টি গুন বিদ্যমান । তাই শরীরের সকল উপকারে দুধ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।
কখন দুধ পান করা উচিত
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে দুধ আমরা কখন পান করবো ? তো তাদের জন্যই বলা দুধ আপনি দিনে বা রাত্রে যে কোন সময় পান করতে পারেন। তবে দুধ সাধারণত রত্রে পান করলে উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। কারণ আমরা জানি Tryptophane নামক অ্যামাইনো এসিড থাকে। যা মাথা ঠান্ডা রাখে এবং রাতের ঘুম ভালো করে।
এছাড়াও রাত্রে ঘুমানোর পর সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পর পেট পরিষ্কার রাখতেও ভূমিকা রাখে । আপনি ইচ্ছা করলে খালি পেটেও দুধ পান করতে পারেন কোন প্রকার সমস্যা নাই। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাদের ল্যাকটোজ জিনিত এলার্জি আছে অথবা গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের খালি পেটে দুধ খাওয়া যাবে না।
কখন দুধ পান করা উচিত নয়
আমরা জানি দুধে যে রকম উপকারিতা আছে, এর কিছু অপকারিতাও আছে। আপনি যদি নিয়ম করে দুধ না পান করেন সেই ক্ষেত্রে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতে পারে । তাই বেশ কিছু সময় আমাদের দুধ খাওয়া উচিত নয়। যেমন ধরুন আপনি যদি খাবার পরেই দুধ পান করেন তাহলে সেটার অর্থ দাঁড়ায় আপনি একই সাথে দুই বারের খাবার খেলেন।
কারণ দুধের মধ্যে সবগুলো পুষ্টিগুণই রয়েগেছে। তাই ভারী কোনো খাবারের পরে দুধ খাওয়া যাবে না। আবার কারো যদি হজমের সমস্যা থাকে সেই ক্ষেত্রে দুধের সাথে ফল মিশিয়ে খাওয়া যাবেনা । যদি আপনার হজমশক্তি ভালো থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি ফলের সাথে দুধ মিশিয়ে খেতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় মসলা জাতীয় খাবারের পরে দুধ খেয়ে থাকি।
এটা একেবারেই ঠিক নয়। কখনোই মসলাজাতীয় বা ভাজাপোড়া খাবারের সাথে দুধ পান করা যাবে না । টক জাতীয় ফলের সাথেও দুধ খাওয়া যাবেনা। যদি কোনো শারীরিক অ্যালার্জি থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে খালি পেটে দুধ পান করা যাবে না। এই বিষয়গুলো খেয়াল রেখেই আমাদের প্রতিদিন দুধ পান করা উচিত।
কেমন দুধ পান করা উচিত ঠান্ড না গরম?
আমরা অনেকেই জানিনা দুধ কি রকম খেতে হয়। ঠান্ডা না গরম? আর তাই অনেক সময় আমরা ঠান্ডা দুধ পান করে থাকি। এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ঠান্ডা দুধ খেলে তা হজম শক্তি বাধাগ্রস্থ হয়ে থাকে। হালকা গরম দুধ খাওয়ানো হচ্ছে সবচেয়ে বেশি উপকারি। সব সময় হালকা কুসুম গরম দুধ খেতে হয়।
এতে করে একদিকে যেমন হজম শক্তির জন্য সহায়ক হয় তেমনি এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায় অনেকাংশে। তাই কোনভাবেই ফ্রিজের ঠান্ডা দুধ খাওয়া যাবে না। ঠান্ডা দুধ খেলে হজম শক্তি বাধাগ্রস্ত হয়।
দুধ পান করার দুয়া
ইসলামে সমাধান নেই এমন কোন বিষয় নেই। প্রতিটি কাজের জন্যই রয়েছে দিকনির্দেশনা। আর কেউ যদি এই নিয়ম কানুন গুলো পালন করে কাজ করেন । তাহলে একদিকে যেমন সে সওয়াবের ভাগিদার হয় । অন্যদিকে তার খদ্যর মধ্যে আল্লাহতায়ালা বরকত দান করেন। আমরা যখন দুধ পান করবো আর তখন দুধ খাওয়ার এই দুয়া অবশ্যই পাঠ করতে হবে। কারন দুয়াটি পাঠ করলে আল্লাহতায়ালার সাহায্যে পাওয়া যাবে। দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ দেয়া হলো।
দুধ খাওয়ার দুয়া আরবীর বাংলা উচ্চারণ : ”আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি ওয়াজিদনা ওয়াজিদনা মিনহু’’।
দুধ খাওয়ার দু-য়ার বাংলা অর্থ: “হে আল্লহ! এই খাবারে আামাদের বরকত দিন এবং তা বাড়িয়ে দিন’’।
দুধ খাওয়ার সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ(সা.) বলেন যখন তোমাদের কেউ দুধ পান করবে, এই দোয়া পাঠ করবে।
দুধ খাওয়ার অপকারিত
এটা একদিকে যেমন অনেক পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ খাবার তেমনি দুধ খাওয়ার ফলে শরীরে দেখা দিতে পারে নানান সমস্যা। আর তাই যে সকল কারনে দুধ খাওয়া যাবেনা বা দুধ খেলে যে সকল সমস্য হতে পারে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখা করা হল।
কিডনিতে পাথর সমস্যায় দুধ খাওয়া নিষেদ
যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তার অবশ্যই দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। কারণ আমরা দেখিছি দুধের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। আর কিডনি পাথরের উৎপাদান বা পাথরের মধ্যেও রয়েছে ক্যালসিয়াম । আর যদি কারো কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে আর এই অবস্থায় বেশি করে দুধ পান করে তহলে এই সমস্যা আরো বেড়ে যাবে। তাই এই সময় দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
ল্যাক্টেজ বা এনজাইম সমস্যায় দুধ নাখাওয়া
অনেকেরই ল্যাক্টেজ বা এনজাইম সমস্যা থাকে তারা যদি দুধ পান করে তাহলে গবেষনায় দেখা গেছে এই সব রোগী দুধ খাওয়ার ফলে এই রোগ আরো বেড়ে গেছে। তাই যাদের এই ধরনের সমস্যা আছে তারা যেন দুধ খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। তা নাহলে এই রোগ আরো বেড়ে যাবে।
আলসার ও গল ব্লাডারের সমস্যায় দুধ খাওয়া নিষেদ
দেহের ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশের আলসার বা ডিউডেনাল আলসার আছে অথবা গলব্লাডরের সমস্যা আছে। তাদের জন্য দুধ খাওয়া নিষেধ । কারন বিভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে পরিক্ষা চালানোর পর দেখা গেছে এই সকল রোগীকে দুধ খাওয়ালে এই রোগ সমূহ আরো বেড়ে যায়।
পেটে অপারেশন অবস্থায় দুধ পান করা যাবেনা
যদি কোন কারণে কারো পেটে অপারেশন করা হয়ে থাকে তবে যতদিন না তার এই পেটের অপরেশনের ঘা বা এই জায়গাটা পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠে ততদিন দুধ খাওয়া যাবেনা।
আয়র জাতীয় ট্যাবলেট সেবন কালে দুধ খাওয়া নিষেদ
শরীরে অনেক সময় আয়রন বা লোহার অভাব দেখা দিলে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। আর তখন ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার তাকে আয়রন বা লোহা জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকে। আর কেউ যদি এই জাতীয় ওষুধ নিয়মিত খাওয়া অবস্থায় দুধ খায় তবে তার শরীরে দেখাদিবে নানান সমস্যা তাই এই সময় দুধ খাওয়া যাবেনা।
শেষ পরামর্শ কিন্তু প্রয়োজনীয়
সুস্থ-সুন্দর ভাবে বাঁচতে হলে জানতে হবে। জানার কোন বিকল্প নেই । দুধ যেমন শরীরের জন্য অনেক উপকারী তেমনি এর
কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তাই উপকারী ভাবে খাওয়ায় হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব । তবেই আমাদের শরীরে দুধ উপকার
আসবে । আর এর বেশ কিছু ক্ষতি করেছে সে বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আর এই সকল বিষয় বিস্তারিত ভাবে
জানতে উপরের দুধ খাওয়ার দুয়া লেখাটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। তাই যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লেখাটি
আপনি পড়ে থাকেন তহলে বলব দুধ খাওয়ার বিষয়ে আজকে থেকে সচেতন হতে পেরেছেন। লেখাটি আপনার কেমন
লেগেছে অবশ্যই দয়া করে কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। যেন পরবর্তীতে আরো সুন্দর সুন্দর লেখা আপনাদের উপহার
দিতে পারি। ধন্যবাদ কষ্ট করে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য । আর যদি সম্পূর্ণ লেখাটি না পড়ে থাকেন, অনুরোধ করছি পড়ে
আসুন দেখবেন দুধ খাওয়া সম্পর্কে আপনার পরিপূর্ণ একটি বাস্তবসম্মত ধারনা তৈরি হবে।
আরো পড়ুন-