সকল সমস্যা সমাধানের দোয়া- জীবনে চলতে গেলে আমরা প্রতিনিয়তই নানামুখী সমস্যার সম্মুখিন হই। আর সেই
সকল সমস্যার সমাধান কেবল একমাত্র আমাদের মহান আল্লাহতালার কাছেই আছে। আমরা যদি তার কাছে সেই সকল
সমস্যার সমাধান চাই, তবে আমরা সুন্দর সমাধান পাব। অনেক সময় আমরা ভুল করে নিজেরা চেষ্টা করি, অথবা মানুষের
কাছে সাহায্য চেয়ে থাকি। কিন্তু ভুলে যাই সেই মহান রব্বুল আলামীনের কথা, যে আমাদেরকে সব সময় হেফাজতকারী
হিসেবে রক্ষা করছেন। আমরা যদি মানুষের মুখাপেক্ষী না হয়ে মহান আল্লাহতালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি তবে
একদিকে যেমন আমাদের রব খুশি হয় । অন্যদিকে আমাদের জন্য সেই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার সহজ হয়। কারণ
একমাত্র তিনিই হচ্ছেন আমাদের রক্ষাকারী । আর কোন মাবুদ নাই, বা কোন ব্যক্তি নেই যে আপনাকে আমাকে রক্ষা
করতে পারে। তাই চলুন সেই মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে আমরা আমাদের বিপদের কথা, বা সমস্যার সময় কিভাবে বলে
বা কোন দোয়া পড়ে সমাধান করতে পারি সেই বিষয় নিয়ে সকল সমস্যা সমাধানের দোয়া লেখায় বিস্তারিত আলোচনা
করব। যাতে করে একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে আমরা আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করে নিতে পারি।
সকল সমস্যা সমাধানের দোয়া
১. যারা নিয়মিত সূরা আল ফাতেহা পাঠ করবে মহান আল্লাহ তালা তাদের সকল সমস্যার সমাধান করে দিবেন। সূরা আল
ফাতেহা যার বাংলা অর্থ : বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহি-ম। আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ -লামি-ন। আররহমা-নির রাহি-ম।
মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন।ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন ,ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম,সিরাতা’ল্লা যি-না
আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ-ল্লি-ন। এ সুরাটির বিশেষ একাধিক নাম হলো- আল-
কাফিয়া বা যথেষ্টকারী, আশ-শাফিয়া বা আরোগ্যকারী। এটি আল্লাহর গুণ-প্রশংসার সুরা হওয়ায় এ সুরার আমলের দ্বারা
ঝাঁড়-ফুক করাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
২. যদি কেহ নিম্নোক্ত এই দোয়াটি পড়ে তবে তার সকল সমস্যার সমাধান হবে ইনশাল্লাহ:
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু… আল্লাহু রাব্বি; লা উশরিকু বিহি শাইআ।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ!… আল্লাহ তুমিই আমার প্রভু। আমি তোমার সঙ্গে কাউকে শরিক করি না।’ (আবু দাউদ)
৩. আপনার সমস্যা সমাধান করার জন্য নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে পারেন।
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি) প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ কিংবা দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিতে উত্তীর্ণ হতে তাঁর উম্মতকে এ দোয়া পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
৪. অনেকেই নানান মুখি প্রভলেম রয়েছে আর তাই আপনি ইচ্ছে করলে আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারেন নিচের
এই দোয়া নিয়মিত পাঠ করার মাধ্যমে।
উচ্চারণ : হাসবুনাল্লাহু ওয়া নেমাল ওয়াকিল; নেমাল মাওলা ওয়া নেমান নাছির।’
অর্থ : আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কাজ সম্পাদনকারী। আল্লাহ তাআলাই হচ্ছে উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।’
৫. এই দোয়াটিও হতে পারে আপনার বিপদ দূর করার উপায় আর তার জন্য নিয়মিত পাঠ করুন এই দোয়াটি।
উচ্চারণ : ‘লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।’
অর্থ : ‘আল্লাহর সাহায্য ব্যতিত কোনো উপায় নেই আর কোনো ক্ষমতাও নেই।’ এ দোয়াটি জান্নাতের গোপন ভাণ্ডারসমূহের একটি। বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বহু মানুষ থেকে পরিক্ষীত দোয়াও এটি।
৬. অনেকেই এই আয়াতটি পাঠ করে থাকে ন তাদের সমস্যার সময়ে আর তাই আপনিও আপনার সমস্যার সময় এই দোয়াটি পাঠ করতে পারেন। দেখবেন মহান আল্লাহতালা আপনার সকল বিপদ দূর করে দিয়েছে।
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ; আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।’
অর্থ : ‘আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।
৭. এটি অনেক সূন্দর একটি দোয়া হতে পারে এটি আপনার জন্য মুশকিলের আসান। আর তাই তাই মহান আল্লাহর রহমত
পাবার আশায় এই দোয়াটি পাঠ করতে পারেন। উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল
আরশিল আজিম; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আ’রশিল কারিম।’
অর্থ : ‘আল্লাহ্ ব্যতিত সত্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি অতি মহান, অতি সহনশীল। আল্লাহ ব্যতিত কোনো সত্য ইলাহ বা
উপাস্য নেই, তিনি বিশাল আরশের মালিক। আল্লাহ ব্যতিত সত্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি আসমান-জমিনের এবং মহান
আরশের মালিক।’ (বুখারি)
৮. উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন দ্বালায়িদ দাইনি ওয়া ক্বাহরির রিজাল।’ (তিরমিজি)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ ((বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও মিশকাত)
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো দুঃখ-কষ্ট বা চিন্তা, অস্থিরতা তথা হতাশাগ্রস্ত হতেন তখন বলতেন।
৯. উচ্চারণ : ইয়া- হাইয়ু ইয়া- ক্বাইয়ূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ।
অর্থ : ‘হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই।’ (তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম, মিশকাত) হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বিপদগ্রস্তের দোয়া হচ্ছে।
১০. উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরঝু ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি; ত্বারফাতা আইন; ওয়া আসলিহলি শানি কুল্লুহু; লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা। (আবু দাউদ, মিশকাত)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার দয়া কামনা করি। তুমি আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের হাত ছেড়ে দিও না। বরং তুমি স্বয়ং আমার সমস্ত ব্যাপার ঠিক করে দাও। তুমি ব্যতীত কোনো মা’বুদ নাই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় উল্লেখিত দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। বিপদ ও সমস্যা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সকল সমস্যা সমাধানের দোয়া এর শেষ কথা
আশাকরি লেখাটি আপনার অনেক ভালো লেগেছে। আর তাই আপনার যে কোন বিপদ আপদে একমাত্র মহান আল্লাহ
তাআলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন। আল্লাহ আপনার যে কোন বিপদ থেকে উদ্ধার করব ইনশাল্লাহ। উপরোক্ত দোয়ার
মাধ্যমে কেউ যদি তার রবের কাছে প্রার্থনা করেন তবে অবশ্যই মহান আল্লাহতালা সেই দোয়া কবুল করবেন, এবং আপনার
বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন, এই কামনা করে শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ।