মুরগির ফাউল কলেরা রোগের কারন ও চিকিৎসা: ফাউল কলেরা মুরগি পালনের আরেক প্রতিবন্ধকতা। মুরগি পালনের বড় অন্তরায়। এই রোগ সম্পর্কে না জানার কারণে, প্রতিবছর মারা যায় হাজার হাজার মুরগি। অথচ অল্প একটু ব্যবস্থা নিয়েই মুক্ত থাকা যায় এজাতীয় রোগ থেকে। আজ আমরা ফাউল কলেরা রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
যাতে করে আপনি আমাদের এই বিষয়ে পড়েই মুরগির ফাউল কলেরা রোগ নির্ণয় ও এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন।তো চলুন ফাউল কলেরা রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক । লেখাটি না টনে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি ফাউল কলেরা রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ফাউল কলেরা রোগের ইতিহাস
এই রোগটি প্রথম ১৮৮০ সালে লুই পাস্তুর দ্বারা স্বীকৃত সংক্রামক রোগ । এটি একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ। যে ব্যাক্ট্রেরিয়ার নাম হল পাস্তোরেলা মাল্টোসিডা ( Pasteurella Matocida) , এই ব্যাকটেরিয়াই মূলত এই রোগের জন্য দায়ী। এই রোগে মুরগির মৃত্যুর হার ৫০ ভাগ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
কারণ এই রোগটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিধায় এই রোগের চিকিৎসায় ব্যয়বহুল, এবং লক্ষন দেখার আগেই অনেক সময় মুরগি মারা গিয়ে থাকে।
ফাউল কলেরা রোগের কারন
ফাউল কলেরা রোগ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে তার মধ্যে যে কারণগুলো উল্লেখ যোগ্য সে কারণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো –
- মুগির বয়স যখন সাধারণত দুই থেকে চার মাস হয় তখন এই রোগ বেশি দেখা যায়।
- খুব বেশি গরম পড়লে এ রোগ বেশি হয়।
- পরিবেশ যদি আদ্র থাকে তাহলে এই রোগে বেশি দেখা যায়।
- আক্রান্ত মুরগি খামারে বা বাড়িতে নিয়ে আসলে এই রোগ দেখা যায়।
- রোগ ওয়ালা মুরগির যে কোন অংশ ভাল মুরগির স্পর্শে আসলে এ রোগ দেখা যায়।
- এই রোগে আক্রান্ত খামারের ব্যবহৃত জিনিস ভালোভাবে আখামার ব্যাবহার করলে এই রোগ হবার সম্ভাবনা দেখা যায়।
- যে খামারে এই রোগ দেখা গেছে সেই খামার ভিজিট করে ভালো খামার ভিজিট করার সময় জীবাণুনাশক না দিলে ।
ফাউল কলেরা রোগের লক্ষণ
অনেক সময় মুরগির ফাউল কলেরা রোগের লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার আগেই মুরগি মারা যায়। তাছাড়া বেশ কিছু লক্ষণ আছে যা দেখলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি মুরগির ফাউল কলেরা রোগ হয়েছে। নিম্নে যেসকল লক্ষণ দেখলে বোঝা যায় এর রোগটি হয়েছে তা উল্লেখ করা হলো।
ফাউল কলেরা রোগের লক্ষণ সাধারণত আমরা দুই ভাবে বুঝতে পারি ১. মুগির দৈহিক বাহিরের দিকের লক্ষণ সমূহ। ২. পোস্টমাডাম এর লক্ষণ সমূহ।
মুগির দৈহিক বা বাহিরের দিকের লক্ষণ সমূহ:
- মুরগির মুখ দিয়ে লালা পরে।
- শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়।
- এই রোগ হলে মুরগি দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা করে।
- সাদা পায়খানা আস্তে আস্তে সবুজ হয়।
- গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যায় বা শরীরে জ্বর থাকে।
- মুরগির গায়ের লোম গুলো উস্কখুস্ক থাকে।
- মুখ ও চোখ দিয়ে পানি পড়বে ।
- গলা ও মুরগির ঝুটি ফুলে ফুলে যাবে।
- মুরগি অনেক দুর্বল হয়ে যায়।
- সবসময় মাথা নিচের দিকে ঝিমাবে।
- যে মুরগি ডিম পাড়ে সেই মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যাবে।
- মুখ লাল হয়ে যায়।
পোস্টমাডাম এর লক্ষণ সমূহ:
- গায়ের কোথাও কোথাও রক্তক্ষরণের চিহ্ন থাকে।
- হৃদপিণ্ড গিলা উদরে অল্প রক্ত বিন্দু পাওয়া যায়।
- যকৃত কালো রঙের হয়ে যায়।
- ৮০ ভাগ মুরগির যকৃত সাদা স্পট পাওয়া যায়।
- ওভা গুলো ভাঙ্গা ভাঙ্গা হয়ে যাবে।
- মুরগির আন্ত্রিক ক্ষত দেখা যাবে।
- অসংখ্য রক্তের ফোঁটা দেখা যাবে হৃৎপিণ্ডে ।
- ফুসফুস গুলো গোলাপি রঙের ধারণ করবে।
উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পরিলক্ষিত হলে বুঝতে হবে যে আপনার মুরগির ফাউল কলেরা হয়েছে।
ফাউল কলেরা রোগের প্রতিকার
যেহেতু এই রোগটি একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গঠিত। তাই এই রোগ প্রতিকার করাই উত্তম। কারণ এর চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই জটিল এবং ব্যয়বহুল। এই রোগের প্রতিকার মূলত আমরা দু’ভাবে করতে পারি। এক হচ্ছে মুরগিকে সঠিক সময়ে টিকা প্রদানের মাধ্যমে আরেকটি হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে।
প্রতিকার ব্যবস্থা মূলত দুই ধরনের ১. টিকা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিকার। ২. প্রাকৃতিক ভাবে প্রতিকার। আসুন নিম্নে প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
টিকা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিকার:
এই রোগের টিকা মূলত দুটি একটা হচ্ছে ১.অয়েল অ্যাডজুটেন্ট। ২. এলাম অধঃ
অয়েল অ্যাডজুটেন্ট: এই টিকা ১ মিলি করে চামড়ার নিচে দিতে হবে, এবং ১৫ দিন পর আবার বুস্টার ডোস দিতে হবে। পরবর্তীতে ছয় মাস পর পর নিয়মিত প্রদান করতে হবে।
এলাম অধঃ:- এ টিকা ১ মিলি করে মাংশে প্রয়োগ করতে হবে, এবং ৬ মাস পরপর এ টিকা প্রদান করতে হবে।
এই টিকা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
প্রাকৃতিক ভাবে প্রতিকার:
বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে চল্লেই এ রোগ প্রতিকার করা যায়। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল-
- নিয়মিত খামার পরিষ্কার করে।
- গরম যখন পড়ে তখন মুরগিকে শরবত জাতীয় খাবার বেশি প্রদান করে।
- মুরগির জায়গা থেকে স্যাঁত সেঁতে ভাব দূর করে।
- আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা রেখে।
- খামারে জীবাণুনাশক স্প্রে করে।
- খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে।
- বাহিরের লোক ভিতরে ঢুকতে গেলে জীবাণু মুক্ত করা।
- বাহিরের কোন পশু পাখিকে খামারে প্রবেশ করতে না দেওয়া।
- খামারে ব্যবহৃত সকল জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখা
উপরোক্ত বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখলে অথবা নিয়মিত টিকা প্রদান করলে এই ভয়াবহ রোগটি থেকে সহজেই পরিত্রান পাওয়া যাবে।
ফাউল কলেরা রোগের চিকিৎসা
এই রোগটি যেহেতু একটি ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস দ্বারা সংগঠিত রোগে। তাই এর চিকিৎসার সময় ভালো মানের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে । এদের মধ্যে যে সকল এন্টিবায়টি ভাল মানের তা উল্লেখ করা হলো।
ciprofloxacin, gentamycin, doxacycline ৩ থেকে ৫ দিন দেয়া যেতে পারে এর সাথে Ati vet suspension/ Sulphatrim powder/S-trim vet তিন থেকে পাঁচ দিন এন্টিবায়োটিক সাথে দিতে হবে।